স্বর্ণের দাম নির্ধারণে শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বৈধ পথে আমদানি না হলেও, দামের হিসাবে অগ্রিম আয়কর যুক্ত করছে সংগঠনটি। এদিকে, একই বাজার থেকে কিনলেও, ভারত ও বাংলাদেশে স্বর্ণের দামে আকাশ-পাতাল ফারাক। স্বর্ণের দামে নৈরাজ্য খতিয়ে দেখার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গত সোমবার দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম পুনর্নিধারণ করে বাজুস। প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা। একই সময়ে ভারতেও বেড়েছে স্বর্ণের দাম।
ইকোনমিক টাইমস পত্রিকার খবর
, মঙ্গলবার ভারতে এক গ্রাম স্বর্ণের দাম ছিল ৬ হাজার ৭৪৮ রুপি। স্বর্ণের হিসাব ভরিতে ও দামের হিসাব টাকায় রুপান্তর করলে এক ভরির দাম হয় এক লাখ ৩ হাজার ৫১৪ টাকা। অর্থাৎ দুই দেশে দামের পার্থক্য প্রায় ১৪ হাজার টাকা। অথচ ভারতে স্বর্ণ আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ভরিতে মাত্র চার হাজার টাকা। কেন এত পার্থক্য, প্রশ্ন ছিল বাজুসের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে।
জবাবে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘যেহতু আমরা লোকাল সোর্স থেকে গোল্ড পাই না, এটা একটা সমস্যা। সেলিং পদ্ধতিটা যদি আমরা আস্তে আস্তে পরিবর্তন করতে পারি তাহলে দেখবেন যে আন্তর্জাতিক বাজারে গোল্ডের যে দাম নির্ধারণ করা হয়, আমাদের এখানেও একই পদ্ধতিতে দাম নির্ধারিত হবে।’
একদিনের ব্যবধানে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ডএকদিনের ব্যবধানে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড
বাজুসের হিসাবে, সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে ২২ ক্যারেট প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৩৩৪ ডলার। স্বর্ণের হিসাব ভরিতে ও দামের হিসাব টাকায় রুপান্তর করলে এক ভরির দাম হয় ৯৬ হাজার ৮৮৩ টাকা। এর সাথে আমদানি পর্যায়ের ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, প্রতি ভরিতে ৪ হাজার টাকা শুল্ক ও ৫ হাজার ১৮৬ টাকা ভ্যাট যুক্ত করে বাজুস। করসহ দাম দাঁড়ায় এক লাখ ১০ হাজার ৯১৩ টাকা। সাথে ব্যবসার মুনাফা আরও ৬ হাজার ৬৬০ টাকা। মোট এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা।
দেশে বৈধ পথে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয় না। তাই অগ্রিম আয়কর দেওয়ার প্রশ্নও নেই। তারপরও করের হিসাব দামে যুক্ত করে বাজুস।
বাজুসের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন ইমপোর্ট তো নাই। বিষয়টি হয়ে গেছে কি, বাইরে থেকে আমরা যে গোল্ডটা পাই, ধরেন ৪ হাজার টাকা ট্যাক্স দিয়ে গোল্ড নিয়ে আসতেসে এয়ারপোর্ট দিয়ে, একেকটা বার। সেটা ইনক্লুড করা হয়েছে।’
এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিলার আই গোল্ডের ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার প্রতি ট্রয় আউন্স ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দেখাচ্ছে ৭ হাজার ৯৪০ দিরহাম। স্বর্ণের হিসাব ভরিতে ও দামের হিসাব টাকায় রুপান্তর করলে এক ভরির দাম হয় ৮৮ হাজার ৭৫৩ টাকা। বাজুসের দেখানো আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে যার পার্থক্য প্রায় ৮ হাজার টাকা। অথচ এই দাম ভারতের শুল্কসহ দামের সমান। অর্থাৎ স্বর্ণের দাম নির্ধারণে নিজেদের স্বার্থই দেখছে বাজুস।
গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারকে তো একটা বেসিস ফর কস্টিং দিতে হবে। অর্থাৎ আমি যে এক লাখ ১৭ হাজার টাকা প্রতি ভরি নিচ্ছি সেটার কমপোনেন্সগুলো কি কি?’
বাজুস নেতাদের দাবি, সরকারি সহযোগিতা পেলে স্বর্ণ বেচাকেনায় আরও স্বচ্ছতা আসবে। সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট