একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে ব্যবহার করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্লস কোম্পানি পিএলসি। শর্ত অনুযায়ী ওই অর্থ নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটি সরকারের বিপরীতে অর্থের সমপরিমাণ শেয়ার ইস্যু করবে। তবে কোম্পানিটির দ্বিতীয় দফায় নেওয়া ১৫২ কোটি টাকার বেশি অর্থের বিপরীতে বিগত চার বছরেও সরকারের বিপরীতে কোনো শেয়ার ইস্যু করেনি।
ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে ইকুইটি হিসেবে ১৫২ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ টাকা নিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে ইকুইটি হিসেবে ১৫২ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ টাকা নিয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা অনুসারে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে অর্থ হাতে পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সেটিকে শেয়ার মূলধনে রূপান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও কোম্পানিটি এ নির্দেশনা অনুসারে সরকারের কাছ থেকে নেয়া অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ার মূলধনে রূপান্তর করেনি। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের নিরীক্ষক কোম্পানিটির সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে তার মতামতে এ তথ্য তুলে ধরেছেন।
নিরীক্ষক তার মতামতে জানিয়েছেন, রিজিওনাল সাবমেরিন টেলিকমিউনিকেশন প্রজেক্ট (এসএমডব্লিউ-৫) ও থার্ড সাবমেরিন কেবল প্রজেক্ট (এসএমডব্লিউ-৬) বাস্তবায়নে সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে ১৬৬ কোটি ও ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫২ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ টাকা নিয়েছে।
এফআরসির ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপন অনুসারে শেয়ার ডিপোজিটের অর্থ হাতে পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সেটিকে শেয়ার মূলধনে রূপান্তর করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি ১৬৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৫ টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে শেয়ারপ্রতি ৭৫ টাকা ইস্যু মূল্যে ২ কোটি ২১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩টি শেয়ার ইস্যু করেছে।
তবে ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে নেয়া ১৫২ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ টাকার বিপরীতে গত ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো শেয়ার ইস্যু করেনি কোম্পানিটি। আর্থিক প্রতিবেদনে এ অর্থকে শেয়ার মূলধনের পরিবর্তে সরকারের কাছ থেকে নেয়া ইকুইটির টাকা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা এফআরসির নির্দেশনার লঙ্ঘন এবং এর ফলে কোম্পানির ইকুইটির তথ্য প্রভাবিত হয়েছে বলে মনে করছেন নিরীক্ষক।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩৯৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ হিসাব বছরে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯ টাকা ৯৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৯ টাকা ৭৮ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। ৩০ জুন ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকা ৯৯ পয়সায়। ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডায় বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে আগামী ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টায় ডিজিটাল প্লাটফর্মে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ অক্টোবর।
সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরেও বিনিয়োগকারীদের ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের ইপিএস হয়েছে ১১ টাকা ১০ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১৫ টাকা ১৯ পয়সা। ৩০ জুন ২০২৪ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৯৩ টাকা ৬ পয়সায়। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের সর্বশেষ ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘ট্রিপল এ’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি ওয়ান’।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং রেটিং ঘোষণার দিন পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক অন্যান্য পরিমাণগত ও গুণগত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রত্যয়ন করেছে ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (সিআরআইএসএল)।
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৮৭ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৮ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৩। এর ৭৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ রয়েছে সরকারের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ২৬, বিদেশী বিনিয়োগকারী ১ দশমিক ২২ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।