যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর (চিপ) পণ্যে নতুন করে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে এবং এটি ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, ওষুধ আমদানির ওপর প্রাথমিকভাবে কম হারে শুল্ক বসানো হবে, যাতে মার্কিন ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় পায়। এরপর শুল্কহার “খুব বেশি” করা হবে বলে তিনি সতর্ক করেন। একই ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের ক্ষেত্রেও।
এর আগে জুলাইয়ের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, তিনি ওষুধ আমদানির ওপর শুল্ক ২০০% পর্যন্ত বাড়াতে চান, এবং আমেরিকায় উৎপাদন শুরুর জন্য কোম্পানিগুলোকে এক থেকে দেড় বছর সময় দেওয়া হবে। এছাড়া দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে তামার (কপার) ওপর ৫০% শুল্ক আরোপেরও হুমকি দেন তিনি।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ ১৯৬২ সালের ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্টের ধারা ২৩২-এর আওতায় ওষুধ ও চিপ আমদানির তদন্ত শুরু করে এপ্রিল মাসে। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে এই খাতে শুল্ক আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্ক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যেমন ফাইজার, ইলাই লিলি এবং মার্ককে প্রভাবিত করবে, কারণ তাদের অনেক উৎপাদন ইউনিট বিদেশে অবস্থিত। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা ওষুধের দাম বৃদ্ধির শিকার হতে পারেন। একইভাবে সেমিকন্ডাক্টর পণ্যে শুল্ক বসানো হলে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
একই সময়, হোয়াইট হাউজ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একটি বাণিজ্য তদন্তও শুরু করেছে। তদন্তে ডিজিটাল বাণিজ্য, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, করনীতি, দুর্নীতিদমন, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা এবং বন উজাড়ের মতো বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হবে।
এর আগে ট্রাম্প ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ৫০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যদিও দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তিনি একে “উইচ-হান্ট” বলে আখ্যা দেন।
এদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, যার ফলে তারা মার্কিন পণ্য যেমন জ্বালানি, কৃষিপণ্য ও ৫০টি বোয়িং বিমান কেনার অঙ্গীকার করেছে। এর বদলে ইন্দোনেশিয়া থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্কহার ৩২% থেকে কমিয়ে ১৯% করা হবে।
জুলাইয়ের শুরুতে ট্রাম্প আরও জানান, বাংলাদেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৪টি দেশের পণ্যে ৪০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে, তবে আপাতত আলোচনার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।ব্যাংক লোন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে। ট্রাম্প যদি EU-র পণ্যে ৩০% শুল্ক আরোপ করেন, তবে তা ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক বাণিজ্য কার্যত বন্ধ করে দেবে বলে সতর্ক করেছেন ইউরোপীয় কমিশনার মারোশ শেফচোভিচ।
তবে ট্রাম্পের নীতিকে ঘিরে “Trump Always Chickens Out” (সংক্ষেপে: TACo) নামক উপহাস থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করেছে। এপ্রিলে শুরু করে জুন পর্যন্ত সময়ে আমদানি শুল্ক থেকে মোট ৬৪ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৭ বিলিয়ন বেশি।
এই শুল্কনীতি বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে এবং এর প্রভাব পড়তে পারে আন্তর্জাতিক ওষুধ ও প্রযুক্তি খাতে।