মুনাফার চেয়ে মানুষ ও পৃথিবীকে অগ্রাধিকার দিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে অগ্রসর হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে অগ্রসর হতে হবে, যা মুনাফার চেয়ে মানুষ ও পৃথিবীকে অগ্রাধিকার দেয়।
আজ হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এ বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এ বছর বিএফএ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো- ‘এশিয়া ইন দ্য চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড: টুওয়ার্ডস আ শেয়ারড ফিউচার’।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, মানুষ আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধকে ধারণ করে চলা অব্যাহত রেখেছে। এই কারণে মানব সভ্যতা ঝুঁকিতে পড়েছে। আধিপত্যশীল অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর নির্ভরশীল এবং প্রবৃদ্ধির নামে তা সম্পদের অতিরিক্ত উত্তোলন ও পরিবেশগত অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবতার জন্য অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু দুর্যোগজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা প্রায় ৬ হাজার ৫শ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সম্পদ ব্যবহার করে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করে দিচ্ছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগিতা, ঋণ-সৃষ্টিকারী নয় এমন, অনুদান-ভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিত করে।’ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তির সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ।
প্রধান উপদেষ্টার বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল, যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিদ্যমান গভীর বৈষম্যসমূহ আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। বৈশ্বিক মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় এশিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তথ্য-চালিত প্রযুক্তি, রোবটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি ক্রমশ বিশ্বকে ভিন্ন একটি রূপ দিচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, উন্নত বিশ্বের তুলনায় এশিয়ার কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ স্থানান্তর ডিজিটাল বৈষম্যকে আরো বিস্তৃত করতে পারে।
তথ্যের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে গভীর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে প্রযুক্তি বিকশিত হয়, তাহলে তা অস্তিত্বগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’ এশিয়াকে অবশ্যই ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। বাসস