হঠাৎ করেই পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। একদিনের ব্যবধানে মসলা জাতীয় পণ্যটির দাম পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ৮ টাকা ও খুচরায় ১০ টাকা। হঠাৎ করে কেন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের কোন জবাব মিলছে না।
গতকাল রাজধানীর অন্যতম পাইকারী বাজার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাবনার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা করে। ফরিদপুর ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজিতে। যদিও ভারতীয় পেঁয়াজের পরিমাণ কম।
হঠাৎ কেন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বাজারটির ব্যবসায়ী মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, আমরা বলতে পারবো না। তবে গত দুই সপ্তাহ যাবত ধাপে ধাপে দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা পাইকারি পর্যায়ে এক পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪২০ টাকা, যা কেজি হিসেবে ৮৪ টাকা। অপর আড়তদার আরমান আলী ভারতীয় ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা ৪১০ থেকে ৪২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। এতে ৮২ থেকে ৮৪ টাকা কেজি করে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে।
আব্দুল কাদের নামের খুচরা বিক্রেতা বলেন, একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজি পাইকারিভাবে ৬ থেকে ৮ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১০ টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন, রবিবার যে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭৬ টাকা সেটি সোমবার রাতে বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা। বর্তমানে পাবনার পেঁয়াজ ৯০ এবং ফরিদপুর ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েক দিন পরেই কোরবানির ঈদ এ উপলক্ষ্যে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে।
বাজারটিতে কথা হয় নাজমা আক্তারের সঙ্গে। মধ্য বয়সী এই নারী বলেন, গত ৩০ মে ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি। ১২ দিনের ব্যবধানে কী এমন হলো পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গেল। এভাবে হঠাৎ করে অধিক দাম বেড়ে গেলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বিপদে পড়ে। তিনি ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৪২০ টাকা দিয়ে। এক কেজি কোষ ছাড়ানো রসুন কিনেছেন ১৮০ টাকায়।
এদিকে ভারতের ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, দেশটিতে পেঁয়াজের দাম দ্রুত বাড়ছে। বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে রাখছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সেগুলো শিথিল করবে।
ভারতে পেঁয়াজের অন্যতম বড় বাজার মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিকের লাসালগাঁওয়ে সোমবার পাইকারিভাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬ রুপিতে। গত ২৫ মে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৭ রুপিতে। সবচেয়ে ভালো মানের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৩০ রুপি ছাড়িয়ে গেছে।
খবরে বলা হয়েছে, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকার কারণেই মূলত পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। জুন মাস থেকে বাজারে যে পেঁয়াজ আসে, তা মূলত কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুত থেকে সরবরাহ করেন। তবে কৃষকেরা পেঁয়াজ বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন, কারণ তাঁরা মনে করছেন, ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে উৎপাদন কম হবে এবং পেঁয়াজের দাম বাড়বে।
ভারতের হর্টিকালচার প্রডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত শাহ বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হলো, কৃষক ও মজুতকারীরা আশা করছেন, সরকার সম্ভবত রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করবে। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তাঁরা পেঁয়াজ মজুত করছেন এবং আশা করছেন যে দাম আরও বাড়বে।