নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ফারগো প্রাইভেট লিমিটেডের অনুষ্ঠানিক যাত্রা
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করতে নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চারের উদ্যোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার লক্ষে যাত্রা শুরু করল ফারগো প্রাইভেট লিমিটেড। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে নিকেতন, গুলশান-১ এ প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কার্যালয়ে এক মিট দ্যা প্রেসের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফার্গো প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হামিদুল এইচ খান এবং পরিচালক এলে ইয়ান সাফ, সিইও ইমতিয়াজ আলমাজি প্রমুখ। এর আগে ১২ মে নেদারল্যান্ডের সাথে ফারগো প্রাইভেট লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তিতে নেদারল্যান্ডস বিশ্বসেরা। এ কারণেই নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে এ যৌথ-উদ্যোগ খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেসেবিলিটি এবং কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। এই যৌথ-উদ্যোগ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্য রফতানি কার্যক্রমকেও সমৃদ্ধ করবে। উদ্যোক্তারা জানান, বিশে^র চল্লিশাধিক দেশে নিরাপদ, প্রাকৃতিক এবং শতভাগ কেমিকেল ও বিষমুক্ত চাষাবাদ নিয়ে কাজ করা নেদারল্যান্ডসের ‘সলিদারিদাদ’ ও সুইজারল্যান্ডের ‘সিনজেনটা ফাউন্ডেশন’ দ্বারা প্রশিক্ষিত বাংলাদেশি কৃষকদের কাছ থেকে ফারগো ফল ও শাক-সবজি সংগ্রহ করে। এছাড়াও, দেশীও সংস্থা পিকেএসএফ, এবং ইফাদ, ইউএসএইড, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত পরিবেশবান্ধব কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রান্তিক কৃষক ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্যকর শুটকি, মশলা এবং অন্যান্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সংগ্রহ করে। তারা জানান, ফারগো একটি বিশেষায়িত ও জ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে বদ্ধপরিকর।
অনুষ্ঠানে হামিদুল হক বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে ও চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ওভারওয়েট ইত্যাদি অসংক্রামক রোগের ব্যাপক বিস্তার রোধে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যকর খাবারের পাঁচটি উপাদান, যথা, হোল গ্রেইন, কোয়ালিটি প্রোটিন, প্ল্যান্ট-বেজড অয়েল, ফল ও শাকসব্জি এবং নিরাপদ পানির কথা বলেছে। উক্ত সুপারিশকৃত খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করতে ফারগো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করছে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মাধ্যমে মানসম্মত জীবন নিশ্চিত করাই ফরগোর লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা ধ্বংস থেকে উন্নয়নের দিকে যাবো। ফারগো আজ থেকে সেই প্রচেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলো। অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা এবং অনিরাপদ খাদ্য খাওয়ায় রোগব্যাধি এবং অকাল মৃত্যুর বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৩৬টিরও বেশি খাদ্যপণ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে বলে জানান হামিদুল হক। নেদারল্যান্ডসের কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এলে ইয়ান সাফ বলেন, বাংলাদেশ থেকে শুরু হওয়া আমাদের এই যৌথ কোম্পানিকে আমরা বৈশ্বিক একটা প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছি। আমরা ইউরোপের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করবো। আমরা বাংলাদেশে এই খাতে আরো বিনিয়োগ আনতে চাই। আমরা চাই বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুনভাবে তুলে ধরবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ড. জিয়াউল আবেদিন বলেন, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। মানুষকে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে ফার্গো যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে আমি একজন গ্রাহক হিসেবে তাতে যুক্ত হয়েছি। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য এই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। এই কাজ ফার্গোর একার নয়, সবার। আশা করি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই এ ব্যাপারে সচেতন হবে।
জানা গেছে, নেদারল্যান্ডস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর কৃষি খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তিতে বিশ্বসেরা দেশ। এই যৌথ-উদ্যোগ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের খাদ্য ও কৃষিপণ্য রফতানি কার্যক্রমকেও সমৃদ্ধ করবে বলে জানানো হয়।