বাংলাদেশের বন্ড বাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে ডেট সিকিউরিটিজ রুলস ২০২১ এ বড় ধরনের সংশোধনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো টেকসই অর্থায়নের কাঠামো বিস্তৃত করা এবং নতুন শ্রেণির বন্ড চালু করা।
বিএসইসির ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যা ৮ অক্টোবর পর্যন্ত জনমত গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। খসড়ায় বন্ড ইস্যুকারীদের জন্য স্বচ্ছতা, প্রতিবেদন, মনিটরিং এবং তথ্য প্রকাশের বিস্তারিত নির্দেশনা রাখা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বাজারে আস্থা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় সবুজ এবং সামাজিক বন্ডের পাশাপাশি নতুনভাবে চালু হচ্ছে জেন্ডার বন্ড, অরেঞ্জ বন্ড এবং সাসটেইনেবিলিটি বন্ড। জেন্ডার বন্ড মূলত নারী ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতার প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। অরেঞ্জ বন্ড শুধু নারী নয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু সহনশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বৃহত্তর লক্ষ্যে ব্যবহার হবে। সাসটেইনেবিলিটি বন্ড সবুজ ও সামাজিক বন্ডের সমন্বিত রূপ, যা একসঙ্গে পরিবেশগত ও সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করবে।
সবুজ বন্ডের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হালনাগাদ করা হয়েছে। এই বন্ডের অর্থ ব্যবহার হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবেশবান্ধব পরিবহন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং অন্যান্য সবুজ প্রকল্পে। খসড়ায় সবুজ প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ, পরিবেশবান্ধব কৃষি, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ ভবন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
সামাজিক বন্ডের ক্ষেত্রে সংজ্ঞা বিস্তৃত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সাশ্রয়ী আবাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এসএমই অর্থায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা। বিশেষভাবে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী যেমন নারী, বেকার, অভিবাসী এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন খাত যেমন জুয়া, তামাক ও অস্ত্রশিল্প তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করতে এবং অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে খসড়ায় কঠোর নিয়ম প্রস্তাব করা হয়েছে। টেকসই বন্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা এসক্রোতে রাখতে হবে। অর্থের ব্যবহার পরিবর্তন করতে হলে বিএসইসির অনুমোদন, বোর্ড রেজল্যুশন এবং ট্রাস্টির সম্মতি আবশ্যক। প্রতিবছর ব্যবহার ও প্রভাব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ বাধ্যতামূলক। এছাড়া বাইরের বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে প্রকল্প যাচাই, স্বাধীন নিরীক্ষকের মাধ্যমে তহবিল ব্যবস্থাপনা যাচাই এবং জনগণের জন্য ওয়েবসাইটে সব তথ্য প্রকাশের নির্দেশনা রয়েছে।
বাজারে উৎসাহ যোগাতে টেকসই বন্ডের জন্য সম্মতি ফি কমানো হয়েছে। যেখানে সাধারণ বন্ডে মোট মূল্যমানের ০.১০ শতাংশ ফি দিতে হয়, সেখানে টেকসই বন্ডে দিতে হবে মাত্র ০.০৩ শতাংশ। হাইব্রিড বন্ডে টেকসই অংশে একই হার প্রযোজ্য হবে, আর সাধারণ অংশে আগের নিয়ম বহাল থাকবে। খসড়ায় টেকসই বন্ডের আবেদন দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম বলেন, আমরা টেকসই অর্থনীতি গড়তে এবং জাতিসংঘের এসডিজি অর্জনে অবদান রাখতে নতুন গাইডলাইন যুক্ত করেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা টেকসই প্রকল্পেই বেশি আগ্রহী। অনেক সময় শর্ত থাকে, প্রকল্প টেকসই না হলে বিনিয়োগ হবে না।
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে একটি সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং উইন্ডো চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অরেঞ্জ বন্ড চালুর পরিকল্পনা বিএসইসি প্রথম নিয়েছিল ২০২২ সালে। তবে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে তিন বছর পর। গত বছর নভেম্বরে ইআরডি, ইউএনডিপি ও আইআইএক্স-এর অংশগ্রহণে ঢাকায় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে বলা হয়, অরেঞ্জ বন্ডের মাধ্যমে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ব্যবহার হবে পোশাকশিল্প, সবুজ অবকাঠামো ও কৃষি খাতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বন্ড কেবল অর্থায়নের মাধ্যম নয়, বরং লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু অভিযোজন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী হাতিয়ার। বিএসইসির এই উদ্যোগে দেশের বন্ড বাজারে বহুমুখিতা আসবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের আর্থিক বাজার আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: জোনায়েদ মানসুর, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৫৬ পুরানা পল্টন, ঢাকা -১০০০। রেজিস্টার্ড : ২৯২ ভূইয়া পাড়া প্রধান সড়ক, খিলগাঁও, ঢাকা- ১২১৯। সম্পাদকীয়: ০১৭৮৯৪২১৪৪৪, বার্তাকক্ষ : ০১৯১৩৫৫৫৩৭১। ই-মেইল: inextpr@gmail.com , (বিজ্ঞাপন), newsuddokta@gmail.com (বার্তাকক্ষ)