জোনায়েদ মানসুর, ঢাকা
দেশের বীমা খাতের ইতিহাসে খুব কম কোম্পানিই এত স্বল্প সময়ে এতটা আলোচিত ও সফল হতে পেরেছে। মাত্র চার বছরের পথচলায় এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি যেভাবে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করেছে, তা শুধু প্রশংসনীয় নয়—অন্য কোম্পানির জন্যও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে।
সূচনা থেকে যাত্রা: ২০২১ সালের ৬ মে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি আত্মপ্রকাশ করে। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের কাছে বীমাকে সহজ, নির্ভরযোগ্য ও গ্রাহকবান্ধব করে তোলা। এ জন্য গড়ে তোলে শক্তিশালী টিম, যাদের নিরলস প্রচেষ্টা আজ কোম্পানিটিকে আলাদা জায়গায় দাঁড় করিয়েছে।
সাফল্যের পরিসংখ্যান: প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই প্রিমিয়াম আয়ে সক্ষমতা প্রমাণ করে কোম্পানিটি।
২০২১ সালে আয় হয় ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
২০২২ সালে তা লাফিয়ে দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকায়।
২০২৩ সালে আয় বেড়ে হয় ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
২০২৫ সালের আগস্ট ক্লোজিং পর্যন্ত মোট অর্জন দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
দেশের অন্যান্য জীবনবীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এত দ্রুত প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধির নজির খুব একটা নেই। এ কারণে আইডিআরএ’র তালিকায় ২০২২ সালে ২০তম এবং ২০২৩ সালে ২২তম স্থানে উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রাহকসেবা: আস্থার মূল ভিত্তি –
কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা এখন প্রায় ৩০ হাজার। সারা দেশে রয়েছে ৭০টি শাখা। এরই মধ্যে ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার বেশি দাবি পরিশোধ করেছে তারা। গ্রাহকসেবা দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত করাই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম অঙ্গীকার। বীমা দাবির ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি হলো—২৪ ঘণ্টা থেকে ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি। আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে চার দিনের মধ্যেই বীমাদাবি পরিশোধ করা হয়।
সম্পদ ও শক্ত ভিত্তি: আজ কোম্পানির মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি ৩ লাখ টাকা। লাইফ ফান্ড ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, বিনিয়োগ ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৮ কোটি টাকা। এই আর্থিক ভিত্তিই তাদের সামনে এগিয়ে যেতে বাড়তি শক্তি জুগিয়েছে।
নেতৃত্ব ও দর্শন :
সাফল্যের পেছনে রয়েছে নেতৃত্বের প্রজ্ঞা। কোম্পানির সিইও মো. শাহ্জামাল হাওলাদার বিশ্বাস করেন—“গ্রাহকের আস্থাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।”তিনি বলেন, “আমরা শুরু থেকেই ডিজিটাল সেবা চালু করেছি। ফলে গ্রাহক টাকা জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিতকরণের বার্তা পান। এটি শুধু আধুনিক সেবা নয়, বরং গ্রাহক আস্থা অর্জনের মূল চাবিকাঠি।”
তিনি আরও যোগ করেন, বীমা খাতে যেসব কারণে মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে, আমরা শুরু থেকেই সেগুলো এড়িয়ে চলেছি। দ্রুততম সময়ে শতভাগ দাবি নিষ্পত্তির অঙ্গীকার আমরা পালন করে আসছি।”
অনন্য অর্জন: এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, প্রবাসীদের জন্যও বিশেষ সুযোগ তৈরি করেছে। এটি ওভারসিজ ব্যবসা পরিচালনায় সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত একমাত্র জীবনবীমা প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রবাসীরা সরাসরি কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে প্রিমিয়াম জমা দিতে পারছেন। এতে যেমন প্রবাসীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি দেশের রেমিট্যান্স আয়ও বাড়ছে।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন : কোম্পানির কর্মকর্তারা মনে করেন, আগামী দিনে গ্রাহকের আস্থা আরও শক্তিশালী হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে সেবাকে আরও সহজ ও দ্রুত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক সহযোগিতা, চেয়ারম্যানের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়েই একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে। সিইও’র ভাষায়—বিগত দিনে যেভাবে গ্রাহকের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে পেরেছি, ভবিষ্যতেও তা ধরে রাখতে কাজ করব।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি শুধু একটি বীমা প্রতিষ্ঠান নয়; এটি আস্থা, আধুনিকতা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। চার বছরের স্বল্প সময়ে তারা যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা নিঃসন্দেহে দেশের জীবনবীমা শিল্পের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়।