নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের পরিদর্শনে দেখা গেছে, সেখানে মিথ্যা ও জাল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
শুধু কোম্পানিকেই দায়ী করা হয়নি, বরং ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস নামের নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকেও অভিযোগ করা হয়েছে। বিএসইসির মতে, নিরীক্ষকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়ে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)-কে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গোল্ডেন হারভেস্টের আর্থিক বিবরণীতে এমন সব লেনদেন দেখানো হয়েছে যা বাস্তবে ঘটেনি। অনেক ক্ষেত্রে জাল লেনদেনের তথ্য বা বিভ্রান্তিকর সম্পদমূল্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা প্রকৃতের চেয়ে শক্তিশালী মনে হয়। বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার এই অনিয়মগুলো নিরীক্ষকরা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছেন।
পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে নতুন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএসইসি অনিয়ম দমন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ নেতৃত্বে কোম্পানি ও নিরীক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গোল্ডেন হারভেস্টের কারখানা ও অফিস সরাসরি পরিদর্শন করা হয়েছে, যেখানে হিসাবের বই ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য যাচাই করে আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এই অনিয়ম কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক বিবরণীর নির্ভরযোগ্যতাকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এফআরসিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ অর্থবছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনগুলোও পর্যালোচনা করতে হবে। যদি তদন্তে দেখা যায় নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান অবহেলা বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তবে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েন, কারণ তারা বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর নির্ভরশীল। নিরীক্ষকের গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভুল গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। এজন্য বিষয়টি এফআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।