480
ঢাকামঙ্গলবার , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প
  4. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প-ব্যাংক-বীমা-নন ব্যাংক
  5. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  6. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  7. উদ্যোক্তা-জীবনী
  8. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  9. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  10. গণমাধ্যম
  11. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  12. জনশক্তি ও পর্যটন
  13. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  14. জাতীয়
  15. দুর্ঘটনা-শোক-দুর্যোগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মার্জার এড়ানোর পথ নেই এক্সিম ব্যাংক ও স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করে বৃহত্তম একটি ইসলামী ব্যাংক গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানিয়েছে ব্যাংক খাতে ধুঁকতে থাকা এক্সিম ব্যাংক ও স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)। তাদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আর্থিক সূচক ভালো না হলে মার্জারে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক সূচক ভালো করার ডকুমেন্টস চেয়েছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। তবে এখনও কোনো ডকুমেন্টস জমা দিতে পারেনি ব্যাংক দুটি। ফলে এক্সিম ব্যাংক ও এসআইবিএল নিয়েই হচ্ছে মার্জার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, তাদের আপত্তির কারণে আমরা বলছি ব্যাংকের আর্থিক সূচক ভালো করতে হবে এবং তার ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। তারা এখনও কোনো ডকুমেন্টস জমা দেয়নি। কারণ আমরা তো জানি তাদের আর্থিক সূচক কেমন! তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

জানা গেছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া পাঁচটি বেসরকারি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত (মার্জার) করার উদ্যোগে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে দুইটি ব্যাংক আপত্তি জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জানায় ক্যামেলস রেটিং, খেলাপি আদায়, এডিআর, ধার পরিশোধসহ যারা ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক সূচকে দৃশ্যমান উন্নতি ঘটাতে না পারে, তাহলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করা হবে।

ধার করে টিকে থাকা এবং আগের ধারও পরিশোধে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোকে আর কোনো তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না। মার্জারের প্রস্তাবে এক্সিম ব্যাংক প্রকাশ্যে আপত্তি জানায়। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন দাবি করেছেন, এক্সিম একটি শক্তিশালী ব্যাংক এবং দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়া ক্ষতিকর হবে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আমরা একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আরও স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে তা উপস্থাপন করতে বলেছে।

আমরা এটি সংশোধন করে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করব। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ অনুযায়ী, এক্সিম ব্যাংকেরও ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ খেলাপি, প্রভিশন ঘাটতি ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা এবং লোকসান ৪০৯ কোটি টাকা। ‎চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে আপত্তি জানায় এসআইবিএলও।
গত ৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সুতরাং, আমরা একীভূত হতে আগ্রহী নই। এস আলম আমাদের ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছে। আমরা এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

আইএমএফের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যদি ৩০ শতাংশ ছাড়ায়, তবে সেটি ‘মৃত ব্যাংক’ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং পুনর্গঠন বা বিলুপ্তির আওতায় আনা হয়। এই পাঁচ ব্যাংকের প্রতিটির খেলাপি অনুপাতই সেই সীমা ছাড়িয়েছে। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ ও আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেই এই মার্জার পরিকল্পনা এসেছে।

‎বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের মার্চ ভিত্তিক তথ্য বলছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মার্চ পর্যন্ত মোট বিতরণকৃত বিনিয়োগ বা ঋণের স্থিতি ছিল ৩৮ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণকৃত ঋণের ৩৮ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। আর একই সময়ে প্রভিশন ঘাটতি ১০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও সূত্র জানিয়েছে জুন প্রান্তিকে এই সূচকগুলোর নেতিবাচক চিত্র আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত এসব তথ্য তফসিলি ব্যাংকগুলো তিন মাস পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়ে থাকে।

তবে সম্প্রতি একীভূত করতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসআইবিএলের খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছিল ৬২ শতাংশ। একিউআর প্রতিবেদন বলছে, ওই সময় ব্যাংকটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ২৩ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের একিউআর প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক্সিম ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ২৫ হাজার ১০১ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এমনকি এই খেলাপি ডিসেম্বর নাগাদ ৫১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলেও মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক্সিম ব্যাংকে বর্তমানে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৯১০ কোটি টাকা। অভ্যুত্থানের পর ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা নিয়েছে। ১৫৫ শাখার ব্যাংকটি বিগত বছরে একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০৯ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির শেয়ারের দর কমে ৪ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংক একীভূতকরণে সম্মতি দিয়েছে সরকার। নতুন প্রণীত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর আওতায় সম্মতি দেওয়া হয়। একীভূত ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার মূলধন। এর মধ্যে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরবরাহ করবে সরকার, আর বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল ও আমানত রূপান্তরের মাধ্যমে।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএফ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, মার্জার এমনভাবে করা উচিত যাতে কাজে দেয়। দুর্বল ব্যাংকগুলো যদি মনে করে তারা একীভূত হলে ভালো হবে, তাহলে মার্জার করা উচিত। তবে জোর করে মার্জার করা উচিত নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে ছিল এই পাঁচ ব্যাংক। এবং তাদের খেলাপি ঋণও অনেক বেশি। এখন তাদের একত্রিত করে একটি সুসংগঠিত কাঠামোর অধীনে আনলে ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা বাড়বে। দ্রুত দুর্বল ব্যাংকসমূহ একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত অনেক দিন ধরে ঝুলে আছে। এখন বাস্তবায়ন করা জরুরি।