চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ এমদাদ উল্ল্যাহকে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে (সিইও) মুহাম্মদ আসিফ সামছকে নিয়োগ দেয় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। তবে তার নিয়োগ প্রস্তাব না মঞ্জুর করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আইডিআরএ’র পরিচালক মোহা. আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নিয়োগ প্রস্তাব না মঞ্জুরের সিদ্ধান্তের কথা কোম্পানিটিকে জানানো হয়।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদের কোন কর্ম অভিজ্ঞতা না থাকা এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে অন্যূন ১০ বৎসরের বীমাবিষয়ক কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় তার এই প্রস্তাব নাকচ করা হয়। এর আগে গত ১২ আগস্ট মুহাম্মদ আসিফ সামছকে চার্টার্ড লাইফের সিইও পদে নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করা হয়। আবেদন পর্যালোচনার পর নিয়োগ প্রস্তাবটি না মঞ্জুর করে চিঠি পাঠায় আইডিআরএ।
চিঠিতে বলা হয়, ‘যেহেতু বীমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা-২০১২(সংশোধিত-২০২৩) এর ৩(খ) অনুযায়ি কোনো ব্যক্তির কোনো বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ লাভের জন্য কোনো বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে বা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে ২ (দুই) বৎসরের কর্ম অভিজ্ঞতার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মুহাম্মদ আসিফ সামছ এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদের কোন কর্ম অভিজ্ঞতা নেই।’
‘যেহেতু বীমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা-২০১২ (সংশোধিত-২০২৩) এর প্রবিধান- ৩(খ) (আ) মোতাবেক “আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে অন্যূন ১০ (দশ) বৎসরের বীমা বিষয়ক কাজে সরাসরি
অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে” প্রবিধি ৩(খ) তে উল্লিখিত অভিজ্ঞতার শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত মনে করিলে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন করিতে পারিবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মেটলাইফ এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ হতে সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ পর্যন্ত (৯টি পদকে) ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদ মনে করে। এর নিম্নপদের কর্মকর্তাকে কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদ মনে করে না। জনাব মুহাম্মদ আসিফ সামছ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন লাইফ বীমা কোম্পানি মেটলাইফ (বাংলাদেশ) এ ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা এর নিম্নপদ সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ৮ (আট) বছর সময় কর্মরত ছিলেন।’
‘যেহেতু প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মুহাম্মদ আসিফ সামছ এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদের কোন কর্ম অভিজ্ঞতা নেই বা আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে অন্যূন ১০ (দশ) বৎসরের বীমা বিষয়ক কাজের অভিজ্ঞতা নেই। সেহেতু চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি এর প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জনাব মুহাম্মদ আসিফ সামছ এর নিয়োগ প্রস্তাব কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নামঞ্জুর করা হয়েছে। গত ৯ জুলাই চার্টার্ড লাইফের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী পদে যোগদান করেন আসিফ। এর আগে ৬ এপ্রিল কোম্পানিটির নিয়মিত সিইও এস এম জিয়াউল হক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। তার স্থলে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এমদাদ উল্লাহকে ভারমুক্ত করে আসিফকে নিয়মিত সিইও করার প্রস্তাব দিতে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত সিইও পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
যদিও বীমা কোম্পানির সিইও নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে-সিইও হতে হলে কোনো বীমা কোম্পানিতে পূর্বে সিইও বা তার অব্যবহিত নিম্নপদে অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, সঙ্গে থাকতে হবে বীমা খাতে অন্তত ১২ বছরের অভিজ্ঞতা। তবে আসিফ সামছ এ পর্যন্ত কোনো কোম্পানির সিইও কিংবা তার অব্যবহিত নিম্নপদে ছিলেন না বলে জানা গেছে। তিনি সর্বশেষ মেটলাইফ বাংলাদেশে এসইভিপি (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট) ও হেড অব ব্যাংকাস্যুরেন্স পদে কর্মরত ছিলেন।
বীমা খাতের প্রচলিত কাঠামো অনুসারে, এসব পদকে সিইও’র অব্যবহিত নিম্নপদ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
সাধারণত অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এডিশনাল এমডি) পদই এ ক্ষেত্রে স্বীকৃত। প্রবিধানের একটি ধারায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ‘ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা’ পদে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে, কর্তৃপক্ষ চাইলে কিছু শর্তে ছাড় দিতে পারে। কিন্তু মেটলাইফ বাংলাদেশের স্থানীয় অফিসে যেসব পদ ‘ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা’ হিসেবে চিহ্নিত, তার মধ্যে আসিফের পদের নাম নেই। এছাড়া, মেটলাইফ বাংলাদেশ একটি বিদেশি বীমা কোম্পানির শাখা হিসেবে কাজ করছে। মূল কোম্পানির আন্তর্জাতিক কাঠামোতেও তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। ফলে এই ব্যতিক্রম ধারার সুবিধাও তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রকাশিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, আসিফ সামছের পদ ‘ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা’ স্তরের অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে এই ব্যতিক্রম ধারার সুযোগও তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালার প্রবিধান ৩ এর দফা (খ) এ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার শর্তে বলা হয়েছে, ‘মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পেতে ‘ইতিপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে বা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যূন ২ (দুই) বৎসরের অভিজ্ঞতাসহ বীমা ব্যবসায় অন্যূন ১২ বৎসরের অভিজ্ঞতা’ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ আসিফ সামছকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে প্রস্তাব করলেও- কোনো বীমা কোম্পানিতেই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা এর অব্যবহিত নিম্নপদে তার চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। আসিফ সর্বশেষ মেটলাইফ বাংলাদেশের এসইভিপি ও হেড অব ব্যাংকাস্যুরেন্স পদে কর্মরত ছিলেন। যেটি কোনভাবেই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদ নয়। দেশের জীবন বীমা খাতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদ বলতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অ্যাডিশনাল এমডিকেই বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে মেটলাইফ বাংলাদেশেও সিইও’র অব্যবহিত নিম্নপদ হিসেবে এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর নামে একটি পদ রয়েছে। যেই পদে আসিফ সামছ দায়িত্ব পালন করেননি।
প্রবিধান ৩ এর দফা (খ) এ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার শর্তে আরো বলা হয়েছে-‘তবে শর্ত থাকে যে, বীমাকারীর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত মনে করিলে উক্ত শর্তের ব্যত্যয় ঘটাইয়া নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন করিতে পারিবে, যথা:- (আ) আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে অন্যূন ১০ বৎসরের বীমা বিষয়ক কাজে সরাসরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে।’ তবে এক্ষেত্রে ‘ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা’ পদের কোনো সংজ্ঞা প্রবিধানে দেয়া হয়নি। আসিফ সামছ তার জীবন বৃত্তান্তে মেটলাইফ বাংলাদেশে দায়িত্বপালনের যে অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন-তা কোম্পানিটির ‘ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা’ পদ হিসেবে প্রতীয়মান হয় না।