480
ঢাকামঙ্গলবার , ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প
  4. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প-ব্যাংক-বীমা-নন ব্যাংক
  5. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  6. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  7. উদ্যোক্তা-জীবনী
  8. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  9. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  10. গণমাধ্যম
  11. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  12. জনশক্তি ও পর্যটন
  13. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  14. জাতীয়
  15. দুর্ঘটনা-শোক-দুর্যোগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় ব্যাহত হচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগ : ডিসিসিআই

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫ ৫:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি” শীর্ষক সেমিনার অদ্য ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: আবদুর রহিম খান উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ব বিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালত সমূহে বর্তমানে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা প্রায় ৪ মিলিয়ন। মামলা কার্যক্রম পরিচালনার দীর্ঘসূত্রিতা স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকে ব্যাহত করছে এবং ২০০১ সালে আরবিট্রেশন অ্যাক্ট হলেও, তা এখনও ভালোভাবে কার্যকর হয়নি। এ অবস্থার আলোকে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে তিনি একটি ‘আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন এবং আইনী প্রক্রিয়ার সংষ্কার একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনায়ন সম্ভব হবে বলে মত প্রকাশ করেন।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তোলছে, যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ক্রমাগত ব্যাহত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। সচিব বলেন, বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সাথে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে আরবিট্রেশন বিষয়টি এখনও যেমন জনপ্রিয় নয় বলে তিনি মত প্রকাশ করে বলেন, এ লক্ষ্যে জনসচেতনা বাড়াতে প্রচারণার উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। তিনি জানান, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী ১মাসের মধ্যে এটার খসড়া চুড়ান্ত করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে বাণিজ্য বিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের উপর তিনি জোরোরোপ করেন।

বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনী প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ইইউ নিবীড়ভাবে কাজ করেছে, যা এদেশের মানুষের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের দিকে যাচ্ছে এবং রপ্তানি বুহুমুখীকরণের জন্য জোরারোপ করছে, তবে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষনে কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন করতে হবে, যেটি বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়াগে সম্প্রসারিত করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকার এ বিষয়টির উপর অগ্রাধিকার হিসেবে গুরুত্ব দিবে। বাংলাদেশের আরবিট্রেশন কার্যক্রম গতি আসলে বর্তমানের বিনিয়োগ স্থবিরতা হ্রাস পাবে রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের লজিস্টিক ও শিপিং খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন ।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত তা নয়, বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে। বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে চলমান আদালতের কার্যক্রমের বাইরে ‘আইনী সংস্থা’ তৈরি করা যেতে পারে বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন, যার মাধ্যমে বিবাদমান প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ব্যারিস্টার মোঃ সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনে রিপোর্টের কন্ট্রাক এনফোর্সমেন্ট সূচকে আমাদের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৮৯তম, যা অত্যন্ত হতাশার বিষয়। তিনি জানান, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থ ঋণ আদালতে প্রায় ২৫০০০ মামলা রয়েছে বিচারধীন রয়েছে, যা আমাদের আইনী কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতাকেই প্রকাশ করে। তিনি, আরবিট্রেশন আইন ২০০১ কে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংশোধনের উপর জোরোরোপ করেন।

অন্ষ্ঠুানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।

বিডা’র মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, শুধুমাত্র আইন করলেই হবে না, এর সাথে প্রাসঙ্গিক প্রাতিষ্ঠানিক সংষ্কার উপর মনোনিবেশ করতে হবে। বিয়াকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান জানান, বিশেষকরে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িঁয়েছে।

রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা বলেন, অবকাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে শক্তিশালী কাঠামোর কারণে সিঙ্গাপুরের বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি জানান, বিনিয়োগ আকর্ষনে আইনী কাঠামোর আমূল সংষ্কারের কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে স্পেশালাইজড কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন ও আরবিট্রেশন আইন সংষ্কারের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাণিজ্যিক আদালত পরিচালনায় বাণিজ্য বিরোধ বিষয়ক অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন।

মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্নে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো.  সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডারবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।