ড্যাপ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, কাঠা প্রতি মনগড়া ইউনিট সংখ্যা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বৈষম্যমূলক ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) স্থগিত করে আগের জনবান্ধব ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এর আলোকে নতুন ভবন তৈরি আইন চেয়েছে তারা সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করেছেন, নতুন ড্যাপের কারণে ঢাকার দুই লাখেরও বেশি জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দাবি আদায়ের জন্য দেশের আইন আদালাত এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবার ঘোষণা দেন ভূমি মালিকরা
আজ রোববার (২৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর ড.দেওয়ান এম. এ. সাজ্জাদ। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক তানভীরুল ইসলাম চৌধুরী, কে এম এজাজ মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ূন কবির শিমুল
এ্যাড. রেজাউল হোসেন (সুপ্রিম কোর্ট), সাংবাদিক বাবলু রহমান, সৈয়দা আফসারুন নাহার লিজা সহ অন্যান্য সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ বলেন, নতুন ড্যাপে জমির মালিকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভবনের উচ্চতা ও আয়তন অযৌক্তিকভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই পরিমাণ জমিতে পূর্বে যেখানে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা যেত, বর্তমানে সেখানে কেবল ৫ তলা অনুমোদন মিলছে। এতে জমির মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ড্যাপে কাঠা প্রতি ইউনিট সংখ্যা হ্রাস এবং এফএআর কমিয়ে দিয়ে ড্যাপ এর নামে রাজউকসহ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জমির মালিকদের ঠকিয়েছে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। নতুন ড্যাপ পাশ হওয়ার পর নিয়ম ভেঙ্গে ঘুসের বিনিময়ে অনেক বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। ড্যাপে শক্ত করে আইন করলেও এটা হবে শুধু ঘুসের ফাঁদ। আপনারা দেখেছেন শক্ত আইন কানুন থাকার পরেও কিভাবে সিলেটের সাদা পাথর নাই হয়ে গেল। তিন বছর হলো ড্যাপ হলেও এর মধ্যে অনেক নদী নালা, খাল-বিল ভরাট হয়ে গেছে। সরকারের সেদিকে কোন নজর নেই। ৩ বছরে ঢাকায় পরিকল্পিতভাবে কোন রাস্তাঘাট তৈরি হয়নি। সরকার শুধু কাগজে কলমে একটা ড্যাপ করেই বসে আছে।
তারা একটা বিষয় নিয়েই শুধু পড়ে আছে ভবন উপরের দিকে নির্মাণ করতে দিবে না। নগর পরিকল্পনাবিদরা যে পরিকল্পনা করেছেন সেটার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। তারা ঢাকার যে প্ল্যান করেছে তাতে অনেক লোকের ঢাকা ছাড়তে হবে। সেই লোকগুলো কোথায় কিভাবে থাকবে তার পরিকল্পনা নেই। আমরা শুনতে পেয়েছে ৩ বছর পর পর ঢাকার ড্যাপ পরিবর্তন হবে। একটা বিল্ডিং বানানো কি ছেলের হাতে মোয়া! যে একটা বিল্ডিং এখন ৫ তলা তৈরি করলাম। ৩ বছর পর নিয়ম পরিবর্তন হবে তখন আবার ৮ তলা তৈরি করবো?
লিখিত বক্তব্যে ভূমি মালিকরা বলেন, একটা শহরের পরিকল্পনা হওয়া উচিত ৫০ বছরকে টার্গেট ধরে। ঢাকায় আগামীতে লোকসংখ্যা বাস্তবতার কারণেই আরো বাড়বে। আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আমাদের নতুন নতুন রাস্তা বানাতে হবে। কিন্তু নতুন ড্যাপের যে সংশোধনী আনা হচ্ছে সেখানে ১২ এবং ১৬ ফুট রাস্তাগুলোকে বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের যে হারে দেশের লোক বাড়ছে তাতে আগামী ৩০ বছর পর কৃষি জমি ব্যাপকভাবে কমে যাবে। কৃষি জমি রক্ষায় এখনই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষি জমিতে কোন বাড়ি বানোনো যাবে না। খালবিল রক্ষা করতে হবে। কিন্তু উপরের দিকে ভবন তৈরি করতে না দিলে এবং কাঠা প্রতি ইউনিট সংখ্যা কমিয়ে দিলে দ্রুত হারে কৃষি জমি খাল বিল শেষ হয়ে যাবে। তখন দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিবে। খাল বিল না থাকায় বন্যা দেখা দিবে। একটু বৃষ্টিতে শহরগুলো পানিতে ভাসবে। একটি মহল মনে হচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন করে দেশকে পঙ্গু করার পরিকল্পনা করেছে। আমরা ঢাকার ভূমি মালিকরা তা হতে দিবো না। আকাশের দিকে জায়গা অফুরান্ত। আমরা ঢাকাবাসী সেটা কাজে লাগাতে চাই। আমরা রাস্তার জন্য জমি দিতে প্রস্তুত। রাস্তা সম্প্রসারণ করতেও প্রস্তুত।
ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ৪টি দাবি জানান তিনি। দাবিগুলো হচ্ছে-২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আলোকে ড্যাপ ২০২৫-৩৫ ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা বৈষম্যমূলক এফএআর সিস্টেম ও কাঠা প্রতি ইউনিট সংখ্যা বাতিল করা;
নির্মাণ অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং রাজউকের হয়রানি বন্ধ করা এবং ড্যাপ সংশোধনী সংক্রান্ত সভাগুলোতে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে অংশীজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
প্রফেসর সাজ্জাদ হুঁশিয়ারি করে বলেন, আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এমনকি আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতেও আমরা পিছপা হবো না। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ভূমি মালিকরা।