480
ঢাকারবিবার , ২৪ আগস্ট ২০২৫
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প
  4. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প-ব্যাংক-বীমা-নন ব্যাংক
  5. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  6. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  7. উদ্যোক্তা-জীবনী
  8. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  9. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  10. গণমাধ্যম
  11. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  12. জনশক্তি ও পর্যটন
  13. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  14. জাতীয়
  15. দুর্ঘটনা-শোক-দুর্যোগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঢাকা চেম্বার আয়োজিত বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা শীর্ষক সেমিনার

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আগস্ট ২৪, ২০২৫ ৫:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারষ্পারিক শুল্কারোপ সহ বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বেসরকাররিখাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস, শিল্পখাতে জ্বালানি সরবরাহ অনিশ্চিয়তা, বিনিয়োগ স্থবিরতা, নানাবিধ দূর্নীতি প্রভৃতি কারণে বেসরকারিখাতের অগ্রগতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয় এবং এ অবস্থার আলোকে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্নের লক্ষ্যে আরো কিছুদিন সময় প্রয়োজন বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

আজ ২৪ আগস্ট, শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ অভিমত জ্ঞাপন করেন। ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. মঞ্জুর হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়কালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, সিএমএসএমই, তথ্য-প্রযুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, লজিস্টিক অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতের উপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উল্লেখজনক হারে বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে এবং ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২.৩%-এ নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, এর কারণে গত বছরের তুলনায় বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি আরও বেশি মন্থর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে, ডিসিসিআই কমপক্ষে ৩বছর এলডিসি উত্তরণ স্থগিত করার প্রয়োজন বলে মনে করে, যাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, একটি শক্তিশালী ট্রানজিশন কৌশল বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলো হালনাগাদ সম্ভব হয়। কর্পোরেট করহার বিশেষকরে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হওয়া উচিত বলে মনে করে ডিসিসিআই সভাপতি, যার কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে না। তিনি আরো বলেন, ২০২৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২.৪৮%-এ নেমে এসেছে, যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং বিদ্যমান অবস্থার আলোকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন, যাতে ব্যবসা-বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমরা দূর্নীতি মুক্ত একটা সমাজ চাই, অভ্যুথানের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, তবে সেটি পাইনি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে রিজার্ভ সহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার জন্য উদ্যোগ থাকলেও কর আহরণের পরিমাণ বাড়াতে এনবিআরকে আরো উদ্যোগী হতে হবে, যদিও এ ধরনের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, বরং হয়রানি অনেকগুনে বেড়েছে। তাসকীন আহমেদ বলেন, এলডিসি উত্তরণে আমরা ভীত নই, তবে বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং আভ্যন্তরীণ আন্দোলন বিক্ষোভ এবং সর্বশেষ ট্রাম্প কর্তৃক পারষ্পরিক শুল্ক আরোপের উদ্যোগ এ পরিস্থিতি আরো অসহনীয় করে তোলোছে। তাই আরো কিছুটা সময় পেলে আমরা নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারব এবং এ উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে রপ্তানি ৩.০৯% হ্রাস পেয়েছে, অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪৬.৮%, এমতাবস্থায় রপ্তানি ত্বরান্বিত করতে তিনি পণ্যের মূল্য সংযোজন, বৈচিত্র্যকরণ, নতুন বাজার অনুসন্ধান, সাপ্লাই চেইন সংযোগ বৃদ্ধি এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য কূটনীতি ত্বরান্বিতকরণের উপর জোরারোপ করেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৫% থেকে কমিয়ে ২০% করেছে, তবুও এ কারণে আত্মতুষ্ট না হয়ে বরং উচ্চমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন, দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ, শক্তিশালী ক্রেতা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং ইএসজি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণের দিকে বেশি মনোনিবেশের আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি জানান, ২০২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে, চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১.৬৭% কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬৭.৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, ওষুধ শিল্পে রপ্তানি ১৫.৮৮% হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮.৭৪ মিলিয়ন ডলারে, অন্যদিকে হালকা প্রকৌশল খাতের রপ্তানি একই সময়ে ১২.৪০% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৫.৪৯ মিলিয়ন ডলারে।

২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) সিএমএসএমই খাতের অভিজ্ঞতা ততটা ভালো ছিলনা, কেননা উল্লেখিত সময়ে এ খাতে ঋণ বিতরণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২৩.৬% হ্রাস পেয়েছে। তাই সিএমএসএমই খাতের জন্য প্রয়োজন লক্ষ্যভিত্তিক নীতি সহায়তা—রাজস্ব প্রণোদনা, নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ, সাশ্রয়ী অর্থায়ন, বিনিময় হার স্থিতিশীলতা এবং সহজীকৃত কমপ্লায়েন্স—যাতে খরচ কমানো যায় এবং প্রতিযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে তিনি সুদের হার হ্রাসের প্রস্তাব করেন তাসকীন আহমেদ, যা ২০২৪ সালের জুনে ১১.৫২% থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের মে মাসে ১২.১১%-এসে পৌঁছেছে।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, দেশের ম্যাক্রো-ইকোনোমি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে এবং রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত হয়েছে, যা স্বস্তির বিষয়। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বেশ কমেছে, তবে চালের মূল্য ক্রমাগত বাড়ছে, তাই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মূল্যস্ফীতি আরো কমতে পারে। তবে, শুধুমাত্র ঋণের সুদ হার বেশি থাকা, না বাণিজ্যিক সহায়ক পরিবেশ অনুপস্থিতির কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না, সেটি খতিয়ে দেখার উপর তিনি জোরারোপ করেন, সেই সাথে মূল্যস্ফীতি না বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ যেন হ্রাস না হয়ে সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, এমতাবস্থায় বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়োনোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ডলার না কিনে, তা বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। তিনি জানান, সরকার এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে, তবে আমাদেরকে সামগ্রিক প্রস্তুুতির বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে, পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, অর্থীনীতিকে খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছে, এমতাবস্থায় সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির টেকসই রপ্তান্তরের উপর বেশ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং বিশেষকরে ব্যাংক খাতকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান।

এছাড়াও অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা), মুদ্রানীতি বিভাগ মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের, পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল পোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলেও মূল্যস্তর বেশ উপরে চলে এসেছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমনের এ বিষয়টি বেশ আশংকার। তিনি উল্লেখ করেন, বন্ডেড ওয়ারহাইস ও ব্যাংক-টু-ব্যাংক এলসি সুবিধার কারণে তৈরি পোষাক খাত আজকে এ পর্যায়ে এসেছে, তাই রপ্তানির সম্ভবানাময় অন্যান্য খাতগুলোকে এধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দূর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক কথা হলেও তা দমনে কার্যকর তেমন কোন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। তিনি আরো বলেন, ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াটি আমরা প্রয়োজনের নিরিখে বাস্তবায়ন করতে পারিনি, ফলে ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত তেমন আশাব্যঞ্জক নয়, কেবলমাত্র রাজস্ব আদায় বেশি হলেই এসএমইদের বেশি সহায়তা প্রদান সম্ভব হবে। তিনি জানান, আমাদের এডিপি বাস্তবায়ন পুরোটাই চলছে ঋণের উপর, যেটা কোনভাবেই টেকসই প্রক্রিয়া নয়, তাই অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও কর আহরণ বাড়ানোর উপর বেশি হারে মনোনিবেশ করতে হবে। ড. মোস্তাফিজ আরো বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল সহ অন্যান অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও যোগাযোগ সংযোগ সহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তিতে বেশ পিছিয়ে রয়েছি, এটার উন্নয়ন জরুরী। তিনি আরো বলেন, এলডিসি পিছিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করা যেতে পারে, তবে আমাদেরকে প্রস্তুুতি ঘাটতি রাখা যাবে না, যেন ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে ঘাটতি না পড়ে। উন্নত দেশগুলোতে এসএমইরাই হলো মূল চালিকাশক্তি, তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমশক্তির তৈরিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা মন্দের ভালো, অবস্থা উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য তা কাঙ্খিত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, দূর্নীতি যে খুব একটা কমেছে তা বলা যাবে না, অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে দূর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং দূর্নীতির কারণে শুধুমাত্র বদলি দিয়ে শাস্তি দিলে হবে না, মানুষের ভিতরকার পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি জানান, আমাদের রপ্তানির চেয়ে আমদানিতে গ্রোথ বেশি, যেটা মোটওে কাম্য নয় এবং টাকা পাচার পশ্চিমের দেশগুলোতে সহজ বলে আমরা রপ্তানির ক্ষেত্রে পশ্চিমাদেশসমূহের দিকে বেশি ঝুঁকছি। দেশের কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধি বেশ কম, কৃষিকে শিল্পের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনার কোন বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, মাত্র ২৩ লক্ষ করদাতাদের নিয়ে দেশকে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়, তাই করদাতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই, এনবিআরের মূল কাজ হলো করদাতা বাড়ানো, যদিও তার হয়রানি করতে বেশি আগ্রহী। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল করলেও এর প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুপস্থিত এবং আমাদেরকে আমলা নির্ভর নীতিমালার নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি এখন বেশ কঠোর বলে বেসরকারিখাতের অভিযোগ রয়েছে, তবে আমরা বেসরকারিখাতের সহনীয় পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না আসলে ব্যবসা পরিচালনা, বিনিয়োগ আকর্ষন ও মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেই ঋণের সুদ হার হ্রাসের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়াও জ্বালানি স্বল্পতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থতির অবনতির কারণেও বিনিয়োগ কাঙ্খিত মাত্রায় আসছে না, শুধুমাত্র উচ্চ সুদহার এককভাবে দায়ী নয়। এছাড়াও দেশের উৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি টেকসহ উপায়ে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি অভহিত করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল পোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা বলেন, ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমে যাওয়া, জুলাই আন্দোলন এবং গতবছরের বন্যার কারণে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ ছিল না। তিনি জানান, বর্তমান অবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সহ উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে নিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু হলে ঋণ বিতরণের খরচ হ্রাস পাবে। ক্লাস্টার উন্নয়নের জন্য ঢাকা চেম্বার সহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠন এবং দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তা দরকার, তবে অনেক সময় উন্নয়ন সহযোগীদের কঠোর নীতিমারা এসএমইদের ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সেই সাথে এসএমইদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

এডিবি’র দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের কে ট্রেড কানিক্টিভিটি বাড়ানো এবং রপ্তানি বাজারের সাথে এসএমইদের সংযোগ বৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহন খরচ হ্রাসের উপর জোরারোপ করেন। সেই সাথে তিনি তৈরি পোষাক খাতে ম্যান মেইড ফাইবারের ব্যবহার বাড়নো এবং চামড়া শিল্পে স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলা সহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বারের পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সরকারি-বেসরকারিখাতের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।