বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক চাঞ্চল্যকর তদন্তে প্রকাশ করেছে যে আশরাফ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে (Ashraf Textile Mills Ltd.) প্রায় ৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রাচীন টেক্সটাইল কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি এক দশকের বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং ২০০৯ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে তালিকাচ্যুত হয়।
তদন্তে দেখা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিটি অবৈধভাবে প্রায় ৮৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকার জমি ও সম্পত্তি বিক্রি করেছে, যার মধ্যে ৭২ কোটি টাকার কোনো ব্যাংক রেকর্ড বা লেনদেনের প্রমাণ মেলেনি।
তদন্তে উঠে আসে, টঙ্গীর উপকণ্ঠে ৪২ বিঘা জমি মাত্র ৮৫ কোটিতে বিক্রি করা হয়েছে, যেখানে বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৫১ কোটি টাকার ক্ষতি করে এই লেনদেন সম্পন্ন হয়।
এছাড়া, আশরাফ সেতু শপিং কমপ্লেক্সের ২০% অংশ প্রতি বর্গফুট মাত্র ১,২৭২ টাকায় বিক্রি করা হয়—যা সেই সময়ের বাজারদরের প্রায় অর্ধেক। এই বিক্রয় থেকে পাওয়া ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার কোনো হিসাব মেলেনি। বিএসইসি জানায়, আশরাফ টেক্সটাইল আইন লঙ্ঘন করেছে একাধিক ক্ষেত্রে—২০০৯ সাল থেকে কোনো বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) অনুষ্ঠিত হয়নি। বোর্ড মিটিংয়ের অনুমোদন ছাড়াই জমি ও সম্পত্তি বিক্রি। শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত না করে চুক্তি স্বাক্ষর। আর্থিক তথ্য গোপন রাখা ও অস্বচ্ছতা বজায় রাখা। কোম্পানি দাবি করেছে, সম্পত্তি বিক্রির অর্থের একটি অংশ প্রাক্তন কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও অবসর সুবিধায় খরচ হয়েছে। তবে বিএসইসি এই দাবির সপক্ষে কোনো নথি বা ব্যাংক রেকর্ড খুঁজে পায়নি। বিএসইসি সুপারিশ করেছে—
আত্মসাৎকৃত ৭২ কোটি টাকা পরিচালকদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে। ফেরত পাওয়া অর্থ নতুন প্রকল্পে, বিশেষত কারখানা পুনরায় চালু করার কাজে বিনিয়োগ করতে হবে। তহবিল ফেরত না আসা পর্যন্ত পরিচালকদের শেয়ার স্থগিত বা জব্দ করা হবে। কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে AGM আয়োজন, হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে।
১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত আশরাফ টেক্সটাইল দেশের প্রথম দিকের বৃহৎ টেক্সটাইল কারখানাগুলোর একটি। স্বাধীনতার পর এটি জাতীয়করণ হলেও পরে আবার মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। তবে পুরনো যন্ত্রপাতি, শ্রমিক অসন্তোষ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে মিলটি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
২০০৬ সালে উৎপাদন বন্ধের পর রূপালী ব্যাংক ঋণ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়, এবং ২০০৯ সালে কোম্পানিটি ডিএসই থেকে তালিকাচ্যুত হয়। বর্তমানে কোম্পানির বিরুদ্ধে বিএসইসি’র এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন চলমান রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: জোনায়েদ মানসুর, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৫৬ পুরানা পল্টন, ঢাকা -১০০০। রেজিস্টার্ড : ২৯২ ভূইয়া পাড়া প্রধান সড়ক, খিলগাঁও, ঢাকা- ১২১৯। সম্পাদকীয়: ০১৭৮৯৪২১৪৪৪, বার্তাকক্ষ : ০১৯১৩৫৫৫৩৭১। ই-মেইল: inextpr@gmail.com , (বিজ্ঞাপন), newsuddokta@gmail.com (বার্তাকক্ষ)