বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি। বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতি বছর এই রোগে ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে, তারা এই রোগে আক্রান্ত কি না। বাংলাদেশে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এদেশে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসার হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণেই হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন এবং হেপাটাইটিস ভাইরাস নির্মূলে সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৮ জুলাই, সোমবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক র্যালিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ‘হেপাটাইটিস: লেটস ব্রেক ইট ডাউন (Lets break it down) বা হেপাটাইটিস: বাধা ভেঙে ফেলি’ প্রতিপাদ্যে সচেতন হোন, বাঁচান জীবন স্লোগানে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এই দিবস উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক র্যালি ও সায়েন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এ সব আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. দেওয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ডা. সাইফুল ইসলাম এলিনসহ হেপাটোলজি বিভাগ ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টরা, হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনগণ, পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টগণ উপস্থিত ছিলেন।
তিনটি সেশনে অনুষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সভায় বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম আযম, অধ্যাপক ডা. মো. রুকনুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. মো. মোহছেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র দাস, ডা. লুবানা আকরাম, ডা. এ বি এম সফিউল্লাহ, ডা. মো. জাহিদুর রহমান, ডা. শারমিন সুলতানা, ডা. আরিফা তাসনিম প্রমুখ।
এসব কর্মসূচিতে জানানো হয়, হেপাটাইটিস শুধু একটি রোগ নয় এটি মানবাধিকার, স্বাস্থ্য সমতা ও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়। এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ সবারই সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণে আক্রান্ত। বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি। লিভার ক্যান্সারের শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী এই দুইটি ভাইরাস। ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি গুরুতর রোগ যা লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে সবাইকে হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং এই রোগ নির্মূলে একযোগে কাজ করতে হবে।
বৈজ্ঞানিক সভায় বলা হয়, হেপাটাইটিস মানে লিভারে প্রদাহ। সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণের মাধ্যমে এটি হয়ে থাকে। পাঁচটি প্রধান ধরণ এ, বি,সি,ডি এবং ই এর মধ্যে বি এবং সি ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের কারণে সবচেয়ে বিপজ্জনক। সময়মতো চিকিৎসা না করলে এর ফল হতে পারে লিভার সিরোসিস, লিভার ফেলিওর এবং এমনকি লিভার ক্যান্সার। উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রে হেপাটাইটিসের কোনো উপসর্গ থাকে না, ফলে রোগীরা বুঝতেই পারেন না যে তারা আক্রান্ত। তাই হেপাটাইটিসকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা হয়।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণ, হাত ধোয়া, নিরাপদ রক্তদান ও গ্রহণ, জীবাণুমুক্ত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহার, হেপাটাইটিস এ এবং বি এর টিকা নেওয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি এর পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কারণ মা আক্রান্ত হলে সন্তানের শরীরেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় সঠিক চিকিৎসা ও জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে টিকা দিলে সংক্রমণ ঝুঁকি ৯০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা সম্ভব। নিরাপদ স্বাস্থ্যচর্চা, যেমন ইনজেকশন, দাঁতের চিকিৎসা, ব্লেড, কানের ছিদ্র এবং রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।