নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রসূল মল্লিকের ভবন দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে রাখার অভিযোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতিপূরণ দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন উচ্চ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানজিম আল ইসলাম। নোটিশটি পাঠানো হয়েছে ভবনের মালিক মরহুম গোলাম রসুল মল্লিকের ছেলে ও উত্তরাধিকারী মো. ওমর ইয়াসির মল্লিক-এর পক্ষে।
প্রখ্যাত যুদ্ধকালীন সাংবাদিক ও ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি (ENA)-এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম গোলাম রসুল মল্লিকের পুত্র এবং ENA-এর প্রধান সম্পাদক মো. ওমর ইয়াসির মল্লিক বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি সম্পত্তি বিরোধ নয়— এটি এক সাংবাদিক সংগঠনের দ্বারা আরেক সাংবাদিকের অধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ।
নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালের ১ এপ্রিল তিন বছরের চুক্তির ভিত্তিতে ডিআরইউকে সেগুনবাগিচার হোল্ডিং নাম্বার ৮/৪-এ, তোপখানা রোডের ভবনের তিনটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়। ভাড়া নির্ধারিত হয় মাসিক ১০ হাজার টাকা এবং অগ্রিম পরিশোধ করা হয় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০০০ সালের ৩১ মার্চ।
চুক্তিটি সম্পন্ন হয় ডিআরইউ তৎকালীন সভাপতি শফিকুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ফিরোজের স্বাক্ষরে। সাক্ষী ছিলেন তিনজন: আব্দুল মান্নান (সাবেক স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক ইনকিলাব), মাহবুবুর রহমান খোকন (সাবেক স্টাফ রিপোর্টার, বার্তা সংস্থা আবাস), এবং একজন আর্থিক প্রত্যয়কারী।
তবে চুক্তির মেয়াদ শেষে ডিআরইউ ভবনটি খালি না করে বরং ধীরে ধীরে পুরো ভবন দখলে নেয়। ইউটিলিটি বিল পরিশোধের দায়িত্ব থাকলেও ডিআরইউ অদ্যাবধি তা পরিশোধ করেনি।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চুক্তির বাইরে প্রথমে ভবনের প্রথম তলা এবং পরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলাও দখলে নেয় ডিআরইউ। প্রতিটি তলা আনুমানিক ৩,৪০০ বর্গফুট আয়তনের এবং বাজারমূল্য অনুযায়ী প্রতি তলার মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে।
এই হিসাবে, ২০০০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত মূল চুক্তির বাইরে প্রথম ও গ্রাউন্ড ফ্লোর দখলে রাখার জন্য দাবিকৃত ক্ষতিপূরণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত চারটি তলা অবৈধ দখলের জন্য আরও ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। মোট দাবি করা ক্ষতিপূরণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এই পরিমাণে কোনো সুদ বা আইনি খরচ যুক্ত করা হয়নি।
আইনি নোটিশে সাত দিনের মধ্যে ভবনটি খালি করে মালিক পক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার এবং দাবিকৃত অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও, ভবনের কাঠামোগত অবনতি, ইউটিলিটি সংযোগের দায়, ভবিষ্যৎ ব্যবহারের সুযোগ হারানোসহ আরও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও দাবি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা পরবর্তীতে আদালতে উপস্থাপিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম জানান, “আমরা ক্লায়েন্টের নির্দেশনায় নোটিশটি পাঠিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি প্রতিক্রিয়া না আসে, তবে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এই অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভবনের মালিক মরহুম গোলাম রসুল মল্লিক ছিলেন—বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সংবাদ সংস্থা ENA-এর প্রতিষ্ঠাতা, কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়নের (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক সাংবাদিক, যিনি বিশ্বে বাংলাদেশের কণ্ঠ পৌঁছে দেন, নাসার অ্যাপোলো মিশন কাভার করা একমাত্র বাংলাদেশি সাংবাদিক, যিনি ৫৩ জন বিশ্বনেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন রোনাল্ড রেগান, ফিদেল কাস্ত্রো, ইন্দিরা গান্ধী ও দেং জিয়াওপিং।
বর্তমানে সেগুনবাগিচার হোল্ডিং নাম্বার ৮/৪-এ, তোপখানা রোডের ভবনের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল এখনও মরহুম মল্লিকের নামেই আসে, যা তাঁর পরিবারের জন্য একপ্রকার অপমানজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। একজন জাতীয় ইতিহাসের অংশীদার ও সমাজের আলোকবর্তিকার সম্পত্তি নিয়ে সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের এমন আচরণ সংবাদমহলে বিস্ময় ও চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে