480
ঢাকাবুধবার , ২ জুলাই ২০২৫
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প
  4. অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প-ব্যাংক-বীমা-নন ব্যাংক
  5. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  6. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  7. উদ্যোক্তা-জীবনী
  8. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  9. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  10. গণমাধ্যম
  11. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  12. জনশক্তি ও পর্যটন
  13. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  14. জাতীয়
  15. দুর্ঘটনা-শোক-দুর্যোগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পলিসি ম্যাকিংয়ে সরকারের সাথে কাজ করছি : নজরুল ইসলাম

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ডেস্ক
জুলাই ২, ২০২৫ ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

দেশের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিজের অগ্র পথিক রানার অটোমোবাইল। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের স্বপ্নের পথে হাটছে পুরো ইন্ডাস্ট্রি। ঝুঁকি নিয়ে শুরু করেছে উৎপাদন। এখন অনেক দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রানারের দেখানো পথে হাটছেন। কোম্পানিটির বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য কোম্পানির সব বিষয়ে নিয়ে  সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে কথা বলেছেন রানার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম।

প্রশ্ন: বর্তমান দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন? এবং আরও ভালো করা জন্য করণীয় কি?

নজরুল ইসলাম: বাংলাদেশের অটোমোবাইল ইন্ডস্ট্রির অবস্থা সম্বন্ধে বলতে হলে যদি আগে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা জানতে চান তাহলে বাংলাদেশের গত কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশ বার্ষিক জিডিপি গ্রোথ আছে। যেটা আশাব্যঞ্জক। মোট জিডিপি গ্রোথের ১৪ শতাংশ আসে কৃষি থেকে, ২৮ শতাংশ আসে শিল্প থেকে আর বাকি ৫৮ শতাংশ আসে সেবা খাত থেকে। টেলিকম, চিকিৎসা ইত্যাদি থেকে। তাহলে টোটাল এক্টিভিটিতে মোভিলিটি খুব বড় একটা ফ্যাক্টর। কত দ্রুত আমি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মুভ করতে পারছি। হাউজহোল্ড ইনকাম কিন্তু বাড়ছে। ইনফ্লেশন আছে এটা সত্য কিন্তু হাউজহোল্ড ইনকামও বাড়ছে। লোকজন বাড়ছে, বেতন বাড়ছে, বিজনেসের ইনকাম বাড়ছে। এসবকিছুই কিন্তু ট্রান্সপোর্টের প্রয়োজনীয়তাকে বড় করে দেয়, আরও ট্রান্সপোর্টেশনন দরকার। কিন্তু কোন ধরনের ট্রান্সপোর্টেশন দরকার? এখন যেগুলো ম্যাচিউরড ইকোনমি সেই জায়গায় কিন্তু স্মল ভেহিক্যল দরকার নাই। ওরা এখন চলে গেছে প্রিমিয়াম ভেহিক্যলে। কারন ওরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন একটা জায়াগায় নিয়ে চলে গেছে। তারপর ওর সাথে একটা প্রিমিয়াম ভেহিক্যলগুলো ব্যবহার করছে হলিডেস। আপনি আমেরিকা বলেন, কানাডা বলেন তাদের প্রেসিডেন্টও পাবলিক ভেহিক্যল ব্যবহার করছে। কারন তাদের স্ট্যান্ডার্ড টা এরকম। আমাদের দেশেও কিন্তু দেখবেন মেট্রোরেলে সরকারি কর্মকর্তা উত্তরায় থাকে বা দূরে থাকে তারা মতিঝিলে আর গাড়িতে আসে না। তারা বলে যে আমার সময় সেভ হয়, সুবিধা হয়। আমাদের পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন অনেক বাড়াতে হবে। সরাদেশে এটা করতে হবে। তখন প্রিমিয়াম ভেহিক্যলের একটা চাহিদা বাড়বে। এখন আমাদের অর্থনীতির যে অবস্থা এই সময়ে স্মল ভেহিক্যলের চাহিদা অনেক বেশি। যেটার উদাহরণ দেখতে পারেন চায়নায়। কারন চায়নাতে মানুষ খুব বেশি, সেখানে স্মল ভেহিক্যল। আপনি ইন্ডিয়াতে দেখেন, সেখানেও প্রিমিয়াম ভেহিক্যলের চেয় স্মল ভেহিক্যল অনেক বেশি। ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে স্মল ভেহিক্যল অনেক বেশি। আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে স্মল ভেহিক্যাল গ্রোথ হয়নি বা খুব কম। তার একটা মূল কারন শুরু থেকেই স্মল ভেহিক্যল হলো মটোর সাইকেল। আমাদের দেশে মটর সাইকেলকে সামাজিকভাবে খুব একটা গ্রহণযোগ্য মডেল হিসেবে বিবেচনা করে না। কিন্তু বাইক যে একটা ট্রান্সপোর্টেশনের মাধ্যম হতে পারে। আপনি যদি গ্রামের দিকে যান, প্রতিটি ঘরেই মোটর সাইকেল আছে। তারা কিন্তু এটাকে রেসিং এর জন্য ব্যবহার করছে না। আমাদের প্রচারণা যেটি ছিল সেটা ছিল ভূল। স্মল ভেহিক্যলের মধ্যে মটর সাইকেল আছে, থ্রি হুইলার আছে, স্মল ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যল আছে। এটার জন্য বাংলাদেশ একটা অ্যাক্টিভ মার্কেট। অর্থনীতি ও অন্যান্য দেশের সাথে যদি তুলনা করেন। এই অ্যাক্টিভ মার্কেটে আমাদের বিনিয়োগ তুলনামূলক কম। রানার ২০০৭ সালে প্রথম শুরু করেছিল তারপর ২০১১ সালে রানারই প্রথম মটর সাইকেল উৎপাদনের সাহস করেছিল। রানার প্রথম এই মটর সাইকেল উৎপাদনের সাহস করাতে কি সুবিধা হয়েছে দেখেন, এখন হোন্ডার ফ্যাক্টরি আছে বাংলাদেশে। বাজাজের ফ্যাক্টরি আছে, হিরোর ফ্যাক্টরি আছে বাংলাদেশে। আমরা যখন শুরু করেছি অন্যরা তখন দেখলো যে আসলেই তো মার্কেট ভালো। এজন্য সরাসরি আসতে পারছে। এই ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন করতে অনেক কিছু করার আছে। সেক্ষেত্রে রানার একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বৈশ্বিকভাবে পুরো অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ৫০ মিলিয়ন শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। পরোক্ষভাবে যেমন লজিস্টিক সার্ভিস, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসে তারপর সার্ভিস, পার্টস এগুলোতে আরও প্রচুর শ্রমিক কাজ করছে।
বাংলাদেশে ফরেইন ডাইরেক্ট ইনভেস্টের অনেক সুযোগ আছে। কারণ, ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে আমাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দরকার, টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট দরকার, ইনোভেশন দরকার এগুলোতে ফরেইন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট দরকার। কারণ, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলি, আমাদের ৩০ শতাংশ শেয়ার হলো গ্রামার্স অ্যান্ড পার্টনার্স। গ্রামার্স অ্যান্ড পার্টনার্স এ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী হলো সিডিসি, আইএফসি এবং এফএমআর। সিডিসি, আইএফসি এবং এফএমআর আমাদের সাথে ছিল যখন আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসে গিয়েছি। আবার আমাদের টেকনিক্যাল কোলাবোরেশন নিয়েছি ইন্ডিয়া থেকে চায়না থেকে। এগুলো নিয়েই আমরা এই জিনিসগুলো করতে পেরেছি। এখানে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ আছে, এটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। কারন আমাদের লোকাল মার্কেট ইনক্লুডেডের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রপ্তানির সুযোগ আছে। আফ্রিকায় রপ্তানির একটা বিশাল সুযোগ আছে। বাংলাদেশের প্রথম মটরসাইকেল রপ্তানিকারক হলো রানার। আমরা প্রথম নেপাল এবং ভূটানে মটরসাইকেল রপ্তানি করেছে। এরকম সুযোগগুলো আছে। উন্নত দেশগুলো যেমন আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান এসব জায়গায় বাজার স্থিতিশীল হয়ে গেছে। এবং অটোমোবাইল মার্কেট ডিক্লাইন করছে। কারন হাইটেক ভেহিক্যালে চাহিদা বেড়ে গেছে। ওইসব জায়গা কারা দখলে নেবে। যেমন একসময় গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি চায়নার দখলে ছিল। পরে আমাদের দিকে আসছে। হাইটেকের পর রেগুলার বা ইউটিলিটি ভেহিক্যলগুলোর দ্বায়িত্ব নিতে বাংলাদেশের জন্য এটাই সঠিক সময়। এটা চায়না এবং ইন্ডিয়ায় অনেক আগেই শরু হয়ে গেছে আমাদের জন্য এখন সুযোগ।


প্রশ্ন: রপ্তানির ক্ষেত্রে আপনাদের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে কিনা?
নজরুল ইসলাম: পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকাটা সবসময় ভালো। ইউরোপীয় ইনিয়নের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বা আমেরিকাকে তো আমরা দেশ বলি আসলে এটা অনেক স্টেট মিলে একটা দেশ। এক্ষেত্রে তো আমাদের কিছুটা সমস্যা হবেই। আমাদের বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে। আমরা আশা করি এটা সমাধান হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল যারা এখানে আছে তাদের মাধ্যমে কি পরিমাণ প্যানিট্রেশন হয়েছে বা কি পরিমাণ ফাঁকা এখনও আছে?
নজরুল ইসলাম: আমরা ৭০ শতাংশ কাচাঁমালের জন্য বাইরের ওপরে নির্ভরশীল। এখন পর্যন্ত আমরা কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পেরেছি কিন্তু এর সাথে কাঁচামাল তৈরি করতে পারিনি। আমাদের স্টীল ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা ওয়েল্ডিং করতে পারি। আমরা বাকি কাজগুলো করতে পারি। আমরা উৎপাদনে ৭০ শতাংশ অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। আমরা নির্ভরশীলতা কমাতে পারি। আমরা প্লাস্টিক পার্টস করতে পারি। আমাদের প্রতি যদি সরকারের সহযোগীতা থাকে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়াতে, ইনোভেশনে লোকাল অটোমেটিভ ইকোসিস্টেম বাড়ানোর জন্য যতো ধরণের সাপোর্ট দরকার সেগুলো যাদি করে। ফ্যাসিলিটি যদি ক্রিয়েট করতে পারে। যেমন স্কিল ডেভলপমেন্টের জন্য ও লোকাল পার্টস উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরণের সুবিধা দিতে পারে তাহলে এখানে আরও বহুদূর যাওয়ার সুযোগ আছে।

প্রশ্ন: জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে?
নজরুল ইসলাম: বৈশ্বিক উষ্ণতা পুরো বিশ্বের জন্য চ্যালেন্জ। আপনারা জানেন কিনা যে পৃথিবীতে বায়ুর তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে। এবং প্রতি বছর এটা বেড়েই যাচ্ছে। এর সাথে প্রশ্ন: সমুদ্রের পানি স্বাভাবিক স্তর থেকে সাড়ে তিন ইঞ্চি উপরে উঠেছে। এধরণের পরিস্থিতিতে কি হয়?
এধরণের পরিস্থিতিতে জলোচ্ছাস, সাইক্লোন, সুনামির মতো দুর্যোগ হয়। কারন তখন প্রকৃতি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। সেইসাথে পুরো বাস্তুসংস্থানে প্রভাব পড়ে, কৃষিতে প্রভাব পড়ে, জীববৈচিত্রকে প্রভাবিত করে। অনেক প্রাণী ছিল যেগুলো এখন নাই। মানুষের স্বাস্থ্যে বড় ধরণের একটা প্রভাব তৈরি করে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশের মানুষের ৮০ শতাংশই এই জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত। তার মানে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ এই প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বাকি ৮০ শতাংশ যাদের বাড়ি নদীর তীরে তারা বন্যা, সাইক্লোন, নদী ভাঙ্গনে পুরোপুরি আক্রান্ত। সুতরাং এই পরিবেশকে রক্ষা করা আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক দ্বায়িত্ব হয়ে গেছে। পরিবেশ সুরক্ষায় কতগুলো বিষয় আছে। আমরা যেসব জিনিস ব্যবহার করছি যেমন পলিথিন ব্যবহার করব কিনা বা অন্য বিকল্প কিছু ব্যবহার করব কিনা। আরেকটা বিষয় হলো কার্বন নিঃসরণ। কার্বন নিঃসরণকে কমাতে হবে। তো আমাদের অটোমোবাইল সেক্টরে তো জ্বীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করি। প্রতি লিটার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে প্রায় ২.৩১ কেজি বা প্রায় আড়াই কেজির বেশি কার্বন নিঃসরণ হয়। এটা যে ধরণের গাড়িই ব্যবহার করেন না কেন, ট্রাক, বাস বা মোটর সাইকেল। এই আড়াই কেজি কার্বন নিঃসরণ কমানোর উপায় কি? উপায় হলো বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার। যেটা আগে ছিল না। বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য যদি চার্জিং স্টেশনগুলো করা যায় সোলার প্যানেল দিয়ে। তাহলে তো আরও ভালো জায়গায় চলে যাবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি হলো নেক্সট ট্রেন্ড। এই বৈদ্যুতিক গাড়ির সাথে যদি রানার যোগ করেন। আমরা যেটা করেছি রানারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিওয়াইডি নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে প্রথম এই বিওয়াইডি আমরা নিয়ে এসেছি। আর টু-হুইলার এতোদিন আমরা ট্রায়াল করছিলাম। এখন বিশ্বের নাম্বার ওয়ান যে ব্রান্ড সেটাকে আমরা নিয়ে আসছি। এটার লঞ্চিং হবে ২৫ তারিখে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত স্থল পথে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল এক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে

প্রশ্ন: শেয়ারবাজারে রানার তো শুরু পর থেকেই ভালো অবস্থানে ছিল কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ডিভিডেন্ট নিয়ে একটু সমস্যা আছে, বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আপনাদের কি ভাবনা আছে?

নজরুল ইসলাম: প্রথম কথা হলো শেয়ার মার্কেটে আইপিওতে যাওয়ার পর এই মার্কেটের ওপর আমাদের কোনকিছু করার নেই। কারন কোম্পানি হিসেবে আমি আমার শেয়ার কিনতেও পারি না বিক্রিও করতে পারি না। পুরো বিষয়টা হলো মার্কেট ট্রেন্ড, মার্কেট কিভাবে এটাকে একসেপ্ট করছে। আমরা বেশকিছু অর্থনৈতিক ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে গেছি। এটা শুধু রানার না, পুরো বাংলাদেশ পুরো পৃথিবী। টানা দুই বছর আমাদের সবকিছু বন্ধ ছিল। কোভিডের সময় সেলস, কালেকশন সবকিছু বন্ধ ছিল। তারপর কোভিডের সময় যে আমরা একটা সাবসিডি পেয়েছিলাম সেটাও পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদেরকে পরিশোধ করতে হয়েছে। তারপরে আবার ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। আবার অর্থনৈতিক মন্দা,ডলার রেট কোনকিছুই নিয়ন্ত্রণে নাই। আমরা এলসি করতে গিয়ে দেখলাম যে ব্যাংকে ডলার নাই এলসি করা যাবে না। এধরণের নানা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা গেছি। যেসময়ে বিজনেস এর গ্রোথ ফেস্ট ছিল সেটা এফেক্টেড হয়েছে। এখন পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেকগুলো স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান রয়েছে যেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ করা শুরু করেছি। আপনারা হয়তো দেখেছেন গত কয়েক প্রান্তিকে কিছু উন্নতি হচ্ছে। আমরা বোর্ড থেকে একটা জিনিস বুঝি যে, শেয়ারহোল্ডাররা আমাদের উপর বিশ্বাস করেছে আমরা তাদের জন্য সর্বোচ্চ যত ভ্যালু ক্রিয়েট করা সম্ভব হয় আমরা সেই ভ্যালু ক্রিয়েট করব। ভ্যালু ক্রিয়েশনের জন্য যতরকম এক্টিভিটি আছে আমরা সেগুলো করব। ডিভিডেন্ডের বেলায় তখন তো প্রফিট ছিল না, প্রফিট থাকলে আমরা সেটা দিতে ইচ্ছুক। একজন বিনিয়োগ করেছে সে ডিভিডেন্ট পাবেনা কেন।

প্রশ্ন: রানারের তো অনেকগুলো কোম্পানি এখন পর্যন্ত একটা কোম্পানি তালিকাভুক্ত বাকিগুলোর ব্যাপারে পরিকল্পনা করছেন কিনা?
নজরুল ইসলাম: আমরা একটা কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছি। আরেকটা কোম্পানির প্রায় ৬০ শতাংশ মালিকানা এই কোম্পানি হোল্ড করে। সুতরাং একটা না দেড়টা কোম্পানি বা তার চেয়ে বেশি বলতে পারেন। আর বাকিগুলো তালিকাভুক্তির জন্য আসলে তালিকাভুক্তির রুলসে কিছু পরিবর্তন দরকার। আমাদের বোর্ডের জায়গা থেকে যদি বলেন, আমার শেয়ার ভ্যালু আন্ডার ভ্যালুড আমার ট্রেজারি থেকে যদি কেনার অনুমতি থাকে আমি কিনতে রাজি আছি। আমি আপনাকে লস দিতে রাজি নাই। আমার শেয়ার যদি ওভার ভ্যালুড হয়, যদি মার্কেটে ডিমান্ড থাকে আমি সেল করতে রাজি আছি বা হোল্ড করতে রাজি আছি। আমার তো সে সুযোগ নাই। আইন তো সেই সুযোগ দেয়নি। অন্যান্য সব দেশেই এটার সুযোগ আছে। আমি তো কিছুই করতে পারি না। বাড়লেও আমার কিছু করার নাই কমলেও কিছু করার নাই।

প্রশ্ন: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তো টাস্কফোর্স এই ব্যাপারে সুপারিশ করেছে এই প্রক্রিয়ায় হয়তো পরিবর্তন আসবে। সেক্ষেত্রে বিএপিএলসির মাধ্যমে কি আপনারা কোন সুপারিশ দিয়েছেন?
নজরুল ইসলাম: আমরা বলেছি, নানা ফোরাম থেকে বলেছি। কিন্তু আমাদের প্রসেসটা বেশ ধীরগতির মনে হয়। বর্তমান টাস্কফোর্স বিএপিএলসিসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেই পরিবর্তন করছে। এক্ষেত্রে আপনারা যারা শেয়ার মার্কেটের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। শেয়ার মার্কেটকে যদি বডি চিন্তা করেন আপনারা তার চোখ। আপনাদের চোখে তারা দেখে আমরাও দেখি। আপনারা দেখেন শেয়ার মার্কেটে কি হচ্ছে, আপনারা লেখেন। আমরাও তো করতে চাচ্ছি। তারা খারপ উদাহরণ কিন্তু ভালো উদাহরণও তো আছে। অনেক শেয়ার আছে যেগুলোর ইপিএস ভালো কিন্তু আন্ডাভ্যালুড। অনেক প্রাইস আছে যেগুলোর কোনকিছুরই হদিস খুঁজে পাবেন পাবেন না কিন্তু সেগুলো ওভার ভ্যালুড হয়ে গেছে। আল্টিমেটলি আমাদের এটা ছোট দেশ। আমাদের ফান্ডের তো লিমিটেশন আছে। আমি যদি একটাতে ইনভেস্ট করি আরেকটাতে তো ইনভেস্ট করতে পারব না। এই ফান্ড টা তো ডাইভার্স হয়ে যাচ্ছে। এবং এটাতে কোন ব্যালেন্সও নাই। এমন যদি হতো ৫০ পার্সেন্ট বা ৩০ পার্সেন্ট কিন্তু না, ফুল ফান্ডটাই ডাইভার্স হয়ে যাচ্ছে। হুজুগে সব লোকজন একদিকে চলতেই থাকে চলতেই থাকে। আমারা যারা ইস্যুয়ার আমরা এটা চাইনা।

প্রশ্ন: রানার নিয়ে আপনার আগামী দিনের পরিকল্পনা কি?
নজরুল ইসলাম: যেটা বললাম যে রানার বাংলাদেশের প্রথম টু-হুইলার ম্যানুফ্যাকচারার এবং টু-হুইলার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। রানার বাংলাদেশের প্রথম থ্রি-হুইলার গাড়ি রপ্তানিকারক। বাংলাদেশে প্রচুর থ্রি-হুইলার এসেছে অনেক আগে, কিন্তু কেউ উৎপাদনের রিস্ক নেয়নি। আমরা ৩০০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে সেটাপ হাউজ করেছি। এটা যারা গ্লোবাল ব্রান্ড তারা এসে এপ্রিশিয়েট করেছে। রানার আসলে বিজনেসে স্ট্রাগলিং করছিল। কারন আমরা কতগুলা এক্সটার্নাল ফ্যাক্টরের ভুক্তোভোগী ছিলাম। যেমন কোভিডের সময়ে আমাদের গেছে তারপরে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলো, এলসি ক্রাইসিস হলো। এখন পরিস্থিতিগুলো স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কিন্তু নতুন সম্যা বাড়ছে। যেমন সরকারের পরিবর্তন, তারপরে বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক। এগুলোর প্রভাব পড়ছে কিন্তু আগেও যেমন ইন্ডাস্ট্রি ও দেশের প্রতি অনেকগুলো কমিটমেন্ট ছিল সামনেও অনেকগুলো প্ল্যান আছে যেগুলো নিয়ে কাজ করব। যেমন লোকাল ম্যানুফ্যাকচারিং এবং অ্যাসেম্বলিং আমরাই প্রথম শুরু করেছিলাম যেটা আমাদেরকে অনুসরণ করেছে অন্যান্য গ্লোবাল ব্রান্ডগুলো। মার্কেট প্যানিট্রেশন এবং গ্রোথ যদি বলেন তাহলে ডমেস্টিক অটোমোবাইল সেক্টর প্রশস্ত হয়েছে। প্রশস্ত হয়েছে কিভাবে আমরা টু-হুইলার বিভিন্ন মডেল এবং বিভিন্ন সেগমেন্ট নিয়ে আমাদের মতো কাজ করতে পারছি। যে মডেলটা পরিপূর্ণভাবে আমাদের দেশে দরকার। যেমন আমাদের এডি ডিলাক্স ৮০ সিসির বাইক। এটা গ্রামের যারা স্মল বিজনেসম্যান, যারা কম টাকায় একটা বাইক চায় তাদের জন্য এটা খুব সুন্দর বাইক। কম টাকায় অনেকদূর যেতে পারছে। ইনোভেশন যদি বলেন তাহলে আরবান এবং রুরাল ট্রান্সপোর্টেশনে অনেকগুলো ইনোভেটিভ মডেল বের করেছি। এখন আমরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে যত সুযোগ আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। সরকারের সাথে কাজ করছি পলিসি ম্যাকিংয়ে। টু-হুইলার এবং থ্রি হুইলার ইমপোর্ট এবং বিভিন্ন দেশে এক্সপোর্ট নিয়ে। এখন বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আমরা একই জিনিস করছি। আমরা এখনও বাস নিয়ে শুরু করিনি হয়তো ভবিষ্যতে করব কিন্তু স্মল ভেহিক্যল এবং প্রাইভেট ভেহিক্যল নিয়ে কাজ করছি।