নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: আজ সোমবার (১২ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে দলটি আর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতাও হারাবে। দলটির নিবন্ধন বাতিল হবে ১৯৭২ সালের ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’র ৯০এইচ (১) (বি) ধারার ভিত্তিতে। পাশাপাশি, আরপিওর ৯০সি (১) (৩) ধারা অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হলে নির্বাচন কমিশন সেই দলকে পুনরায় নিবন্ধন দেবে না।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে চলমান ও ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শনিবার (১০ মে) রাতে জরুরি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী সোমবার (১২ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
বৈঠক শেষে রাত ১১টার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে দলটির সব ধরনের কার্যক্রম—সাইবার স্পেসসহ—সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সকালে (১১ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইসি এখন সরকারি গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাল গেজেট প্রকাশ হলে আমরা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। কমিশনের আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের স্পিরিট বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ গত রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে একটি সংশোধনীও অনুমোদন করা হয়েছে। এ অনুযায়ী, এখন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেকোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সহযোগী গোষ্ঠীকেও শাস্তির আওতায় আনতে পারবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। এই অভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি হয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকে। সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালাতে শুরু করলে তা দ্রুত রূপ নেয় ‘হাসিনার পদত্যাগ’কে কেন্দ্র করে একদফা দাবিতে, যা শেষ পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থানে গড়ায়।