480
ঢাকারবিবার , ৪ মে ২০২৫
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  5. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  6. উদ্যোক্তা
  7. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  8. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  9. গণমাধ্যম
  10. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  11. জনশক্তি ও পর্যটন
  12. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  13. জাতীয়
  14. ডিএস‌ই- সিএস‌ই-বিএস‌ইসি
  15. নগরজীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিজিএমইএ নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা তৎপর

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকা:
মে ৪, ২০২৫ ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

  • জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা মামলার আসামীরা নির্বাচনের প্রার্থী
  • বিজিএমই’এর বিতর্কিতরা হলেন-শেহরিন সালাম ঐশী, মহিউদ্দিন রুবেল ও মিরান আলী
  • কেউ কেউ গণহত্যায় সহায়তাকারী হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এজাহারভুক্ত আসামি
  • ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অনিয়ম ও ভুয়া ভোটের পাতানো নির্বাচন ছিল ২০২৪-২০২৬
  • আসন্ন বিজিএমই নির্বাচনে গণহত্যায় সহায়তাকারী পলাতক ব্যবসায়ী নেতারা গোপনীয় মিশন রয়েছেন
  • চট্টগ্রামের ভোটার ঢাকার  তালিকায়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর আসন্ন নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উঠে-পড়ে লেগেছে তরুণ ও অভিজ্ঞরা। থেমে নেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররাও। তারা গতবছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যায় অভিযোগে অভিযুক্ত। কেউ কেউ  গণহত্যায় সহায়তাকারী হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এজাহার ভুক্ত আসামি। বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি এস এম মান্নান কচির নেতৃত্বে এসব ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ের আড়ালে ক্রাইম করেছেন বলে অভিযোগও রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যায় উত্তরা ও মিরপুরে কচির নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনী মূল ভূমিকা পালন করে। ছাত্র আন্দোলনে কয়েকশত ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার পরও ওই বোর্ড ও সভাপতি কোনো শোকবার্তা দেয়নি। ২০২৪-২০২৬ সালের বিজিএমইএ পর্ষদ নির্বাচনে এস এম মান্নান কচি ও তার দল ক্যাডার বাহিনী দিয়ে পাতানো নির্বাচন দিয়ে সংগঠনটির ক্ষমতা দখল করেনও বলে অভিযোগ রয়েছে। কচিকে নির্বাচিত করতে বিপুল টাকাও ঢালেন অনেকেই। বিজিএমইএ  এ পর্ষদেরই পরিচালক শেহরিন সালাম ঐশী, মহিউদ্দিন রুবেল ও মিরান আলী (সহ-সভাপতি)।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও গণহত্যায় জড়িত, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের (বিজিএমইএ ব্যবসায়ী) সহযোগীরা দিনদিন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আসন্ন বিজিএমইএ ২০২৫-২০২৬ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের অবস্থান পাকা-পোক্ত করার লক্ষ্যে বেশ দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন তারা। যাদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনের গণহত্যায় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সহায়তাকারী হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এজাহার ভুক্ত আসামি। তারা আওয়ামী লীগের দোসর, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠজন। জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলন ঠেকাতে এবং গণহত্যায় সহায়তার পাশাপাশি অর্থ যোগানদাতা হিসেবে বিজিএমইএর অনেক ব্যবসায়ী এবং এমপির নাম উঠে এসেছে। বর্তমানেও এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সিন্ডিকেট মিলে শেখ হাসিনার পক্ষে সরকারবিরোধী গোপন ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো-তারা আওয়ামী লীগের দোসর ও সাবেক এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর কন্যা শেহরিন সালাম ঐশী। বিজিএমই’এর বিতর্কিত সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ও বিজিএমইএর সাবেকসহ সভাপতি মিরান আলী অন্যতম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে বলছে, বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে প্রতিশোধ নিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিজিএমই-এর সাবেক পলাতক সভাপতি মান্নান কচি প্যানেলের বেশ কিছু পরিচালক। আসন্ন বিজিএমই নির্বাচনে গণহত্যায় সহায়তাকারী পলাতক এই ব্যবসায়ী নেতাদের গোপনীয় মিশন রয়েছে। মিশন বাস্তবায়নে বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তাদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। আসন্ন বিজিএমই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হতে বিতর্কিত শেহরিন সালাম ঐশী, মহিউদ্দিন রুবেল ও মিরান আলী প্রকাশ্যে বেশ দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। বিজিএমইএ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও ভোটার তালিকা নিয়ে উঠেছে জোর বিতর্ক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিরপুর ও আশুলিয়ায় জুলাই আগস্টে শ্রমিক বিক্ষোভ ঠেকাতে একাধিক শ্রমিকলীগের নেতাদের নিয়ে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন শেহরিন সালাম ঐশী, মহিউদ্দিন রুবেল ও মিরান আলীসহ অসংখ্য ব্যবসায়ী।   বিজিএমইএর সাধারণ সদস্যদের দাবি, বিজিএমইর আসন্ন নির্বাচনে ফের যাতে বিতর্কিত সাবেক পরিচালক এবং গণহত্যার দোসরদের অবস্থান না থাকে তার ব্যবস্থা করার।

শেহরিন সালাম ঐশী: আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ সাবেক এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর কন্যা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন। অভিযোগ রয়েছে, মিরপুর-আশুলিয়ায় জুলাই আন্দোলনের এজহারভুক্ত আসামী শেহরিন সালাম ঐশী। জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলন ঠেকাতে এবং গণহত্যায় সহায়তার পাশাপাশি অর্থ যোগানদাতা হিসেবে তার নাম উঠেছে এসেছে। বর্তমানেও এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সিন্ডিকেট মিলে শেখ হাসিনার পক্ষে সরকারবিরোধী গোপন ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর-আশুলিয়ায় জুলাই আন্দোলনের এজহারভুক্ত আসামি শেহরিন সালাম ঐশী দৈনিক বাংলার গৌরবকে বলেন, “আমার জানামতে বাংলাদশের কোথাও আমার নামে কোন মামলা রুজু হয়নি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক সাধারণ ব্যাবসায়ীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দোষ এসব ব্যবসায়ীদের কোনভাবে হয়রানি না করে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ” তিনি বলেন, “আমি ২০১২ সালে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করে, ব্যাবসার পাশাপাশি বাংলাদেশ হাইকোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে আছি। আমি আমার ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সকল আইন মেনে চলি। দেশের একজন ক্লিন ইমেজের নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমি কখনো কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না এবং আমার কোন পদ-পদবীও ছিলোনা। ভবিষ্যতেও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কোন ইচ্ছাও আমার নেই। একজন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী হিসেবে আমার তৈরি শিল্প কোম্পানি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের ট্যাগলাইনটিকে বিশ্বব্যাপী বিস্তার করতে এবং বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় ভুমিকা রেখে চলেছে। জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়েও আমার শিল্প কারখানাগুলো কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়নি এবং আমার আশপাশের শিল্প কারখানাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি আমার সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছিলাম। আমি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে পারি, দেশের বাহিরে আমার কোন প্রকার বিনিয়োগ নেই বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে আমার তৈরি পোশাক শিল্প ভূমিকা রেখে চলেছে।”

মহিউদ্দিন রুবেল :  আসন্ন বিজিএমইএ নির্বাচনে জুলাই আন্দোলনের গণহত্যায় সহায়তাকারী হিসেবে তিনিও আসামী বলে অভিযোগ রয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলন ঠেকাতে এবং গণহত্যায় সহায়তার পাশাপাশি অর্থ যোগানদাতা হিসেবে তার নাম উঠেছে এসেছে। বর্তমানেও এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সিন্ডিকেট মিলে শেখ হাসিনার পক্ষে সরকারবিরোধী গোপন ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, মহিউদ্দিন রুবেল ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই ফ্যাক্টরি চট্টগ্রামে অবস্থান করলেও তিনি বরাবরই নিজের নাম লিখিয়েছেন ঢাকার ভোটার তালিকায়। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এই বিতর্কিত ভোটার তালিকায় তিনি নিজের নাম লিখিয়েছেন  রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। এত বছর বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের ভাগিনা হিসেবে পরিচয় দিয়ে মহিউদ্দিন রুবেল ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী দোসরদের ক্ষমতার ব্যবহার করেছেন। রাজধানীর বাইরে অবস্থিত ফ্যাক্টরি মালিক রুবেল ঢাকার ভোটার তালিকায় নাম থাকা নিয়ে বেশ অসন্তোষ বিরাজ করছে সংগঠনটিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর-আশুলিয়ায় জুলাই আন্দোলনের আসামি ও বিজিএমইএ সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল দৈনিক বাংলার গৌরবকে বলেন, ” কোনো ধরণের মামলার কথা আমার জানা নেই। আমি একজন স্বচ্ছ ইমেজের ব্যবসায়ী হিসেবে কখনো কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলাম না। ব্যবসায়িক কাজে দলমত নির্বিশেষে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা সবার সাথেই আমার কাজ করতে হয়েছে সামনেও হয়তো হবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক নানান ঘটনাচক্রে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত। এ খাতের বৈরিতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমি সবসময় একটিভ ছিলাম। আমার সফলতাকে বাধাগ্রস্ত করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একটি অসাধু মহল নানামুখী গুজবে ব্যস্ত রয়েছে। যে মহলটি বিগত কয়েক বছরে দেশের লুটপাট দুর্নীতিরগ্রস্থ ব্যক্তিদের হাজার হাজার কোটি টাকা নিজেদের ব্যবসায় ইনভেস্ট করিয়েছেন। র্নীতিবাজদের যত অর্থ রয়েছে পুরোটাই তাদের কাছে রয়েছে। সেই চক্রটি তাদের কাজে থাকা দুর্নীতি ও লুটপাটের অর্থ ব্যবহার করে ব্যবসায়ী সমাজ কে, আমাকে এবং বিজিএমই এর মত গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে গুজব ছড়াচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বর্তমান সরকারকে আমার এবং সকল ব্যবসায়ীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতার বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। বিগত আওয়ামী সরকারের কোন মন্ত্রী-এমপি-নেতার সঙ্গে কোন ব্যক্তিগত যোগাযোগ, যোগসাজশে কিংবা সহায়তার অভিযোগ অবশ্যই বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। কারণ,বর্তমান সরকার জানেন যে, দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুদৃঢ করার ক্ষেত্রে আমিসহ প্রত্যেক ব্যবসায়ী কিভাবে দিনরাত প্রাণবন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভোটার সংক্রান্ত বিষয়ে বলতে চাই আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের সাথে মিল রেখেই দীর্ঘ সময় ধরে যাবতীয় প্রফেশনাল কাজ করি, করছি এবং করবো, জ্ঞানের স্বল্পতার অভাবে কেউ কেউ ভিন্ন ধারণা রাখতেই পারে। বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ বিজিএমইএ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার নামে মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য উক্ত সংবাদ প্রকাশের পূর্বে আমার মতামত বা বক্তব্য নেয়া হয়নি যা অপসাংবাদিকতার সামিল এবং সাংবাদিকতার নীতি ও নৈতিকতা বিরোধ। বিগত পতিত স্বৈরাচারীর দোসর যারা চায় না দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াক এগুলো তাদের অপপ্রচার বলে মনে করি।

মিরান আলী: বিগত জুলাই আন্দোলন ঠেকাতে অর্থ যোগানদাতা ও গুলি করে ছাত্র জনতাকে হত্যাচেষ্টার মামলা এজহারভুক্ত আসামি তিনি বলে জানা গেছে। এ কারণে মিরান আলী পালিয়ে বেড়ান। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। মিরান আলী বিটপি গ্রুপ ও মিসামী গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মিরান আলী বিটুপি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রেজা আলীর পুত্র। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার অন্যতম ঘনিষ্ঠ দোসর সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে রেজা আলীর ঘনিষ্ঠ সখ্যতা ছিল। এই সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে তারা আইটি ও টেলিকম সেক্টর এবং বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর বহু কাজ বাগিয়ে নিয়ে শত শত কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠফোনে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে হোয়াসটঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তার কোন সাড়া মেলেনি।

এস এম মান্নান কচির বিরুদ্ধে অভিযোগ: ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট  মিরপুর ১০-এ ছাত্রদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেন বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি (বর্তমানে তিনি সাবেক) । তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যায়  সরাসরি তিনি জড়িত। এ কারণে  বিজিএমইএ’র সাধারণ সদস্যরা  গত ৮ আগস্ট বিজিএমইএ সভাপতিসহ তার বোর্ড সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, বর্তমান বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যায় উত্তরা ও মিরপুরে কচির নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনী মূল ভূমিকা পালন করে। তা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

বিজিএমইএ সদস্যরা অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালে বিজিএমইএ পর্ষদ নির্বাচনে এস এম মান্নান কচি ও তার দল ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সংগঠনটির ক্ষমতা দখল করেন। এ কাজে সদ্য সাবেক সংসদসদস্য সালাম মুর্শেদী, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামকে নিজ বাহিনীসহ সরাসরি অংশ নিতে দেখা যায়। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীও এ দায় এড়াতে পারেন না। ছাত্র আন্দোলনে কয়েকশত ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার পরও ওই বোর্ড ও সভাপতি কোনো শোকবার্তা দেয়নি। ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ও গণজোয়ারে বিজিএমইএ সভাপতি এবং তার বোর্ড সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী ভূমিকা পালন করায় তারা দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। ২০২৪-২০২৬ সালের বিজিএমইএ পর্ষদ নির্বাচনে এস এম মান্নান কচি ও তার দল ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সংগঠনটির ক্ষমতা দখল করেন। বিজিএমইএ  এ পর্ষদেরই পরিচালক শেহরিন সালাম ঐশী, মহিউদ্দিন রুবেল ও মিরান আলী।

অভিযোগ রয়েছে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচন ছাড়াই ব্যবসায়ীদের বৃহৎ এই সংগঠনের সভাপতি হন তিনি। মান্নান কচিকে নির্বাচিত করতে বিপুল টাকাও ঢালেন বিজিএমইএ সাবেক পরিচালক খসরু চৌধুরীসহ অন্যরা। বিনিময়ে গার্মেন্টের বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয় কচির সিন্ডিকেট।

অনিয়ম ভুয়া ভোটের ২০২৪২০২৬ নির্বাচন : বিজিএমইএ ২০২৪-২০২৬ নির্বাচনে বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অনিয়ম ও ভুয়া ভোটার দিয়ে অবৈধভাবে ভোট দেয়ার অভিযোগ এনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ সদস্যদের একাংশ। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠনটিতে এমন দাবি উঠে। সম্প্রতি বিজিএমইএর সদস্য ও মাইশা ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান পর্ষদে যারা আছেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করে আসেননি। অনেকে ভোট দিয়েছেন, তারা ভোটারও হতে পারেন না। আমরা মামলা করেছিলাম, কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে আদালতকে বুঝিয়ে তাদের পক্ষে রায় নিয়ে নির্বাচন করা হয়। মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ক্ষমতায় আসে, যা সাধারণ সদস্যদের মনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

আরও জানা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ২০২৪-২৬ মেয়াদের জন্য বিজয়ী হয় সম্মিলিত পরিষদ, যারা আওয়ামীপন্থী প্যানেল হিসেবে পরিচিত। তবে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের জেরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। এর পরপরই ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবি উঠতে থাকে। পর্ষদ ভেঙে দেয়া ও নতুন করে সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনের দাবিতে ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট থেকে সরব হন বিজিএমইএর সবশেষ নির্বাচনে হেরে যাওয়া ‘ফোরাম’প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ।  এদিকে গতবছরের ১৯ আগস্ট বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া ও নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন সংগঠনের সদস্যদের একাংশের জোট ‘ফোরাম’ প্যানেলের মহাসচিব রশিদ আহমেদ হোসাইনী।

বিজিএমইএ আসন্ন নির্বাচন: বিজিএমইএ এর ২০২৫-২৬ বছরের নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্যানেল সাজাচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গ্রুপ- সম্মিলিত পরিষদ এবং ফোরাম। বোর্ডের ৩৫ পরিচালক পদে ভোটে লড়াইয়ে উভয় প্যানেলেই প্রার্থী বাছাইয়ে থাকছে চমক। দুই গ্রুপই জয় নিয়ে আশাবাদী এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটে জিতলে গার্মেন্টস মালিকদের পাশে থাকবেন সবসময়। আগামী ৩১ মে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএতে নির্বাচন। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মিলিয়ে ভোটার হয়েছেন প্রায় দুই হাজার। এসব ভোটাররা বলছেন, তারা চান সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী হউক সৎ ও যোগ্য প্রার্থী, যারা কাজ করবেন পোশাক শিল্পের কল্যাণে। এর আগে ২০২৫-২৬ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৬ এপ্রিল উত্তরা বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেল— সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের প্রার্থীরা। পাশাপাশি ৬ জন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় বিজিএমইএ’র প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন দুই প্যানেলের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান। এবারের বিজিএমইএ নির্বাচনে ফোরাম প্যানেল লিডার হলেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু)। সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার হলেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম।