480
ঢাকাশুক্রবার , ২ মে ২০২৫
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  5. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  6. উদ্যোক্তা
  7. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  8. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  9. গণমাধ্যম
  10. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  11. জনশক্তি ও পর্যটন
  12. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  13. জাতীয়
  14. ডিএস‌ই- সিএস‌ই-বিএস‌ইসি
  15. নগরজীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজপথে বিক্ষোভ করলে তদন্ত ছাড়াই চাকরি যাবে

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ডেস্ক
মে ২, ২০২৫ ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’ সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করতে যাচ্ছে। এতে ১৯৭৯ সালের সামরিক শাসনামলে প্রণীত ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ’-এর কয়েকটি ধারা আবার চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো সরকারি চাকরিজীবীদের রাজপথে সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি বন্ধ করা, সহকর্মীদের কর্মস্থলে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে না পারা এবং সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভের মতো কার্যক্রম রোধ করা।

সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী উল্লিখিত অপরাধে অভিযুক্ত হলে কোনো তদন্ত ছাড়াই আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করা যাবে সরকারি কর্মচারীদের। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগ এ সংশোধনের কাজ করছে। সংশোধিত খসড়া আইন শিগগির উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল জানান, ‘সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি তোলা হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দেয়। একাধিক ক্যাডারের কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে যান, অনেকে দেশ ছাড়েন। অনেক কর্মচারী অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। কেউ কেউ আবার অন্যদের অনুপস্থিত থাকতে প্ররোচিত করছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চায়। সংশোধিত খসড়ায় বলা হচ্ছে, কোনো কর্মচারী যদি নিজে অনুপস্থিত থাকেন, অন্যকে অনুপস্থিত থাকতে উসকানিও দেন কিংবা দাপ্তরিক শৃঙ্খলা বিঘ্ন করেন, তাহলে তিনি অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তদন্ত ছাড়াই তাকে চাকরিচ্যুত করা যাবে। প্রয়োজনে পদাবনতি কিংবা বেতন কর্তনের মতো শাস্তিও দেওয়া যাবে।

সংশোধিত খসড়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অভিযুক্ত কর্মচারীকে দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হবে। চাইলে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ মিলবে। এর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে দোষী মনে করলে তিন দিনের মধ্যে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আট দিনের মধ্যে সরকারি চাকরি হারাতে পারেন কোনো কর্মচারী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর অনেক কর্মকর্তা ওএসডি হন, অনেকে বিক্ষোভে জড়ান। কেউ কেউ আবার সচিবালয়ের বারান্দায় শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান। এসব ঘটনায় প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে চায় সরকার। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এই উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে। কারো ভিন্নমত বা অভিযোগ প্রকাশ করাকেও ‘সরকারবিরোধিতা’ হিসেবে বিবেচনা করে শাস্তি দেওয়া হতে পারে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন এমন এক জন জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমার চাকরির মেয়াদ এখনো ২৫ বছর হয়নি। তাই সরকার চাইলেও আমাকে অবসরে পাঠাতে পারছে না। নতুন আইনের মাধ্যমে হয়তো সেই পথ তৈরি হচ্ছে।’ বর্তমান ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’-এর ৪৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, ২৫ বছর চাকরির পর সরকার জনস্বার্থে কাউকে অবসরে পাঠাতে পারে। তবে নতুন সংশোধনীতে ২৫ বছর পূর্ণ না হলেও নোটিশ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ আইন মানেই হচ্ছে ‘কালো আইন’-এর ঝুঁকি।

সাবেক সচিব ও লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলা করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে, তবে কর্মচারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত।’ সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আইনের অপব্যবহার যেন না হয়, সেজন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট গ্যারান্টি দিতে হবে।’

এদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের ৮২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে একযোগে ওএসডি করা হয়। যাদের অনেকের চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রস্তাবিত সংশোধিত আইন পাস হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।এছাড়া চলমান আন্দোলন নিয়েও সরকার কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর নেতারা সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশোধিত আইনের সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।