480
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১ মে ২০২৫
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  5. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  6. উদ্যোক্তা
  7. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  8. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  9. গণমাধ্যম
  10. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  11. জনশক্তি ও পর্যটন
  12. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  13. জাতীয়
  14. ডিএস‌ই- সিএস‌ই-বিএস‌ইসি
  15. নগরজীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মজলুমের হক রক্ষার অঙ্গীকার হোক রক্তস্নাত মে দিবসের অঙ্গীকার ঃ সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী
মে ১, ২০২৫ ৫:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রাচীন মিশরীয় যুগে যে দাসপ্রথার উদ্ভব হয়, সেখানে দেখা যায়, মানুষকে দাস হিসেবে বন্দী রাখা হতো ও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করানো হতো। সেটা পাহাড় কেটে প্রাসাদ বানানো কিংবা পাথরের উপর পাথর বসিয়ে পিরামিড বানানো। ক্ষমতার কাছে শ্রম ছিল কুক্ষিগত। বেশি সময় কাজ করানো, মজুরি কম দেওয়া, কর্মঘণ্টায় মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ, সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীতে শাসক ও শোষিত নামক দুটি গোষ্ঠী তৈরি হয়। শ্রমিক মানেই মানবেতর জীবন। ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় গড়ে উঠে ঔপনিবেশিক তত্ত্ব। দরিদ্র হতে থাকে আরও দরিদ্র। ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি হতে থাকে দেশে দেশে। শাসকচক্র তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মেতে উঠে যুদ্ধ-বিগ্রহে। আর তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় এই শ্রমিক তথা দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শ্রমিকরা আজও অবহেলিত। শ্রমিক অসন্তোস, কর্মস্থলে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে শ্রমিকের মৃত্যুঝুঁকি, শ্রমবাজারে মন্দাভাব ইত্যাদি বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর এক নিত্যকার ঘটনা। বাংলাদেশের শ্রমিকদের আজ বিদেশ গমনের প্রবণতা এইসব কারণে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও শ্রমিকবান্ধব দেশ হিসেবে আজও আমরা নিজেদের দাবি করতে পারিনি। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। আমরা প্রকারান্তরে শ্রমিকদের দাসই ভেবে থাকি।

এজন্যই বাড়ির কাজের লোক, রিকশা-চালক, দারোয়ান এইসব মেহনতি মানুষের মহান মে দিবসে কোনো ছুটি নেই। তারা জানেও না এই দিবসটি কী। আগামীর পৃথিবীতে শ্রমিকদের জন্য রয়েছে এক ভয়ংকর বার্তা। এই দিনটিতে পৃথিবী জুড়ে শ্রমিকদের অবদান এবং ঐতিহাসিক শ্রমিক আন্দোলনের গৌরব গাঁধা পটভূমি ও প্রেক্ষাপটের কথা স্মরণ করা হয়ে থাকে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিত ভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন। অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।

১৮৮৬ সালে আমেরিকার হে মার্কেটে বিক্ষোভকারীরা শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন, আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ, খারাপ ধরনের কাজের পরিবেশ, কম মজুরি ও শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। এঁদের গ্রেফতার করা হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ডও, যাঁরা মারা গিয়েছিলেন, তাঁরা হে মার্কেট শহীদ হিসেবে পরিচিত।

হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন ১লা মে তারিখে যেকোনো আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালে তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পরেন।

১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।

১৮৮৯ সালে সোশালিষ্ট ও লেবার পার্টি ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

১৮৯০ সালে থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে।

১৮৯১ সালে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।

১৮৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রী জন স্পারও ডেভিড থমসন সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার কানাডার শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রেও একই দিনে শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা।

১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে ১লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না- থাকলেও বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট এবং কিছু কট্টর সংগঠন তাদের দাবি জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসাবে বেছে নেয়। কোনো কোনো স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়ে থাকে। পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চায়না, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সেসব দেশে এ উপলক্ষ্যে সামরিক কুচকাওয়াজেরও আয়োজন করা হয়।

দীর্ঘ আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের পরে আমেরিকা ১৯১৬ সালে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবী মেনে নেয়।

১৯১৭ সালে শ্রমিক অস্থিরতা ও দাঙ্গার বিপ্লবে শামিল হয় শ্রমিকরা। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে শ্রমিকদের একাত্মতা ঘোষণার মাধ্যমে রুশ বিপ্লবের সফলতা আসে এবং বলশেভিক (কম্যুনিজম) সরকার গঠিত হয়। রাশিয়ার বিপ্লবের পরে ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইস্টার্ন ব্লকের দেশগুলিতে ১লা মে হয়ে ওঠে জাতীয় ছুটির দিন। এই উদযাপনের অন্যতম অঙ্গ ছিল কুচকাওয়াজ, মস্কোর রেড স্কোয়ারে এই দিনের কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকতেন শীর্ষ কমিউনিস্ট নেতারা, প্রদর্শিত হতো সোভিয়েত মিলিটারি শক্তি।

১৯২৩ সালের ১লা মে মাদ্রাজ হাইকোর্টের অনতিদূরে এবং ট্রিপলিকান সমুদ্রতটে সিঙ্গারাভেল্লু চেট্টিয়ারের নেতৃত্বে হিন্দুস্থান শ্রমিক কৃষক পার্টি বিরাট সমাবেশের মাধ্যমে প্রথম মে দিবস পালন করে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত সরকার দিনটিকে সরকারি দিবস হিসেবে পালন করে।

আর্জেন্টিনায় মে দিবসে সাধারণ ছুটি থাকে এবং সরকারী ভাবে শ্রমিক দিবস উদযাপন করা হয়।

বলিভিয়ায় ১লা মে শ্রমিক দিবস এবং সাধারণ ছুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দিনটি সরকারি ভাবে পালন করা হয়।

ব্রাজিলে শ্রমিক দিবস সাধারণ ছুটি হিসেবে পালিত হয়। এদিন ঐতিহ্যগতভাবে অধিকাংশ পেশাদার বিভাগের ন্যূনতম বেতনকাঠামো পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

সারা বিশ্বের সকল শিল্প কারখানার মালিক পক্ষ, সকল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর মালিক পক্ষ, অফিস আদালতসহ সংলিষ্ঠ দপ্তর সমূহের কর্মকর্তাদেরসহ মজলুম শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষদের প্রতি মানবিক হওয়ার ও হক রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব।

লেখক ঃ  গবেষক