নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রিজার্ভ আবার ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে শক্তিশালী হচ্ছে রিজার্ভ। বর্তমানে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিতে দেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার। ২০ দিনের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে ১০৩ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে, গত ৬ মার্চে ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আকুর বিল পরিশোধের পর তা আবার কমে ২০ বিলিয়নে নেমে যায়। এরপর রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ আবার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত তিনটি কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। প্রথমত, সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমান সরকারের ওপর প্রবাসীদের আস্থা বেড়েছে, দ্বিতীয়ত, ডলারের বিনিময় হার বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে ডলারের দর অনেকটাই বাজারমুখী করা হয়েছে। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি রেমিট্যান্স আসছে, সেই সঙ্গে রপ্তানি আয়ও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। তৃতীয়ত, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী তৎপরতায় হুন্ডি চক্র অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে আমদানি ব্যয়ও খুব বেশি বাড়ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী (গ্রস রিজার্ভ) দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার।
তবে এ দুই হিসাবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরও একটি হিসাব রয়েছে, সেটি ব্যয়যোগ্য বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ। এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু আইএমএফকে প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ হিসাবে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।
সে হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা ওপরে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। দেশে সে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে। আর নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের বিপিএম-৬ মানদণ্ড অনুসারে। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে গত মার্চ মাসে রেকর্ড ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই একক কোনো মাসে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এসেছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। সে হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বহিরাগত চাপ সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গত সাত মাসে রেমিট্যান্সে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ এবং রপ্তানিতে ১১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’