জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক হিসেবে আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। সংগঠনটির মতে, বিইআরসির নির্দেশনায় নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদা আলাদা গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফিকি।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) জানিয়েছে, টেকসই ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগকে তারা সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করলেও, বিইআরসি ঘোষিত নতুন প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার নতুন বিনিয়োগ এবং শিল্প সম্প্রসারণে বড় বাধা সৃষ্টি করবে। সংগঠনটির মতে, বিইআরসির নির্দেশনায় বিদ্যমান গ্রাহকদের তুলনায় নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্টভুক্ত, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হবে—যা একই খাতের কোম্পানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই বৈষম্যমূলক মূল্যনীতি ন্যায্য প্রতিযোগিতার ভিত্তিকে দুর্বল করে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সমান সুযোগ নিশ্চিত করাকে অনিশ্চিত করে তোলে।
ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের যে মডেলটি বিইআরসি ঘোষণা করেছে তা নজিরবিহীন এবং এর কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা আলাদা জ্বালানী খরচের কারণে উৎপাদন খরচে পার্থক্য তৈরি হবে এবং এ ধরনের মূল্য কাঠামো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থি। সর্বোপরি, বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন শুধু নতুন শিল্প কিংবা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জনকে ধ্বংস করবে।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে একটি স্বচ্ছ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্বালানী মূল্য নির্ধারণ কাঠামো আবশ্যক। আমরা জ্বালানীর চাহিদা ও তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন এই গ্যাসের মূল্য কাঠামো পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মতো বৃহৎ লক্ষ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি নির্ধারণে দাবি জানাই।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, সর্বশেষ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেকোনো নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্টকে নতুন সংযোগ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর অর্থ—যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ব্যবহার করছে, তাদের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে। এই বিধানকে সংগঠনটি অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, এটি নিয়ন্ত্রকদের হাতে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে তারা আগের চুক্তি বাতিল করে জোরপূর্বক নতুন চুক্তি করতে বাধ্য করতে পারে এবং অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করতে পারে। ফলে এমন ব্যবস্থা ভবিষ্যতে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে।
ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখে বিইআরসি গ্যাস ট্যারিফ পুনঃনির্ধারণের জন্য একটি গণশুনানির আয়োজন করেছিল, যেখানে উপস্থিত সবাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ওই সংগঠনটি দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ সকল অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছে, এবং তাদের মতে, শুধুমাত্র এই ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে শিল্প খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওই সংগঠন বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছে, যেন এই বৈষম্যমূলক মূল্যহার পুনরায় পুনর্বিবেচনা করা হয়। তারা এই ধরনের জরুরি সংস্কারের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে সহায়ক জ্বালানি মূল্য ঘোষণা করবে সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: জোনায়েদ মানসুর, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৫৬ পুরানা পল্টন, ঢাকা -১০০০। রেজিস্টার্ড : ২৯২ ভূইয়া পাড়া প্রধান সড়ক, খিলগাঁও, ঢাকা- ১২১৯। সম্পাদকীয়: ০১৭৮৯৪২১৪৪৪, বার্তাকক্ষ : ০১৯১৩৫৫৫৩৭১। ই-মেইল: inextpr@gmail.com , (বিজ্ঞাপন), newsuddokta@gmail.com (বার্তাকক্ষ)