*তিন বছর ধরে প্রেষণে প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান
*সিনিয়রদের টপকে প্রমোশন ফাইলে জোরপূর্বক স্বাক্ষর
* অফিসের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার (গাড়ি নিয়ে সিরাজগঞ্জে ঈদ উদযাপন)
শিকদার মুরাদ : মশিউর রহমান। এক সময় এলজিইডির প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার ‘ভাগ্য খুলে’ ২০১০ সালে, যখন তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান বিভিন্ন পদের ছয় হাজার কর্মচারীকে জিওবি খাতে নিয়োগের উদ্যোগ নেন। ঘুষের বিনিময়ে চাকরি স্থায়ী করার সেই দুর্নীতির জোয়ারে ভেসেই এলজিইডিতে গেঁড়ে বসেন মশিউর।
উপ-সহকারী প্রকৌশলীর পদে কর্মরত এ মশিউর রহমান এখন এলজিইডিতে যেন একছত্র অধিপতি। তার কর্মস্থল এলজিইডি সিরাজগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর হলেও, বাস্তবে তিনি রয়েছেন রাজধানীর এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে। যেখানে তিনি প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ মিয়ার অঘোষিত ‘বিশেষ সহকারী’ এবং ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত।
প্রকৌশলী আব্দুর রশীদের ছায়াতলে থেকে মশিউর পরিণত হন একজন ‘বিশেষ সহকারী ও ক্যাশিয়ার’-এ। একদিকে ঘুষ-চাঁদাবাজির অভিযোগ, অন্যদিকে সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবমূল্যায়ন করে নিজ বলয়ে প্রভাব বিস্তারই হয়ে উঠেছে তার প্রধান কাজ। এলজিইডির ৬৪ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রায় ১৩০ প্রকল্পের পিডিদের কাছ থেকে ইফতারের নামে ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন মশিউর।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় দুই কোটি টাকার এই ফান্ড তিনি নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী ও পিডি এই প্রতিবেদককে অর্থ লেনদেনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অফিসের গাড়ি ব্যবহারের অধিকার রাখেন না। অথচ, মশিউর ব্যবহার করেন এলজিইডির সিনিয়র কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ ‘টয়োটা হাইজ’। গত ঈদে তিনি ওই গাড়িতে করে পরিবারসহ সিরাজগঞ্জে যান এবং ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরেন। গাড়ি, চালক, জ্বালানি—সবই সরকারি খরচে।
সম্প্রতি মশিউর প্রধান প্রকৌশলীর সহায়তায় বিশজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রমোশন ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠান। অথচ ওই তালিকায় সিনিয়রদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) বিষয়টি মানতে না চাইলেও মশিউর চাপ প্রয়োগ করে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রার্থীদের কাছ থেকে মোট এক কোটি টাকা ঘুষ আদায় করেছেন।
সূত্র বলছে, বর্তমানে মশিউরের ব্যবহার রূঢ় ও স্বেচ্ছাচারী। তিনি সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন এবং আউটসোর্সিং ফার্ম, কনসালটেন্ট নিয়োগ, বদলি, অনুমোদন—সব কিছুই তার হাতের মুঠোয়।
এত অভিযোগের পরেও এলজিইডির প্রশাসন নিরব। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “জুনিয়রদের প্রমোশন ফাইল কিভাবে পাঠানো হলো, সেটিই আমাদের বোধগম্য নয়।”
মশিউরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এলজিইডির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কীভাবে এত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে, সেটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া এবং দুর্নীতির কাঠামোগত অংশীদারিত্বের স্পষ্ট দৃষ্টান্ত। এখন সময় এসেছে—এই ‘ক্ষমতাধর’ মশিউরের দৌরাত্ম্য রোধে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা রাখার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: জোনায়েদ মানসুর, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৫৬ পুরানা পল্টন, ঢাকা -১০০০। রেজিস্টার্ড : ২৯২ ভূইয়া পাড়া প্রধান সড়ক, খিলগাঁও, ঢাকা- ১২১৯। সম্পাদকীয়: ০১৭৮৯৪২১৪৪৪, বার্তাকক্ষ : ০১৯১৩৫৫৫৩৭১। ই-মেইল: inextpr@gmail.com , (বিজ্ঞাপন), newsuddokta@gmail.com (বার্তাকক্ষ)