কাজী মোহাম্মদ হাসান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যুগ্মসচিব ও মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। একাধিক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত এই আমলা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সম্পর্ককে পুঁজি করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রেখেছেন।
আওয়ামীপন্থী সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত কাজী হাসান স্বৈরাচারী প্রশাসনিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে একাধিকবার পদোন্নতি লাভ করেছেন। তিনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর ভূমি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU)-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার নামে থাকা পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে কোটি কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন। শুধু তাই নয়, বিদেশের কয়েকটি দেশে অবৈধভাবে টাকা পাচারের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গোয়েন্দা ইউনিটের রিপোর্টেও উঠে এসেছে।
এছাড়াও, একটি বেসরকারি ফিনান্স কোম্পানিতে কয়েক কোটি টাকার বিনিয়োগ, পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থ সঞ্চয় এবং নিজের পরিচয় গোপন রেখে ও ভাইয়ের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বিপুল সম্পত্তি—যার অনেকটাই অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত বলে ধারণা করা হয়। এমনকি রাজউকের প্লটও নাকি জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি।
এই সব ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কাজী হাসানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিচারের আওতায় না আনলে শুদ্ধি অভিযানের কোনো কার্যকরতা থাকবে না।
জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা ও পূর্বাচলে ৩০টি প্লট বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিচালক কাজী মোহাম্মদ হাসানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিকভাবে যাচাইয়ের পর এ বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিককে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) তিনি অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।
দুদকে আসা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজউকের উত্তরা ও পূর্বাচলে ৩০টি প্লট বরাদ্দ হয়েছে ঘুষের বিনিময়ে। এছাড়া ওইসব জায়গায় প্লটের মালিকানা পরিবর্তন ও হস্তান্তরেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। রাজউকের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক কাজী মোহাম্মদ হাসান তার ব্যক্তিগত পিয়ন খোকন মিয়ার সঙ্গে যোগসাজশে এসব দুর্নীতি করেছেন বলে দুদকের আমলে নেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকা ও তার নিজ জেলা চট্টগ্রামে একাধিক বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে রাজউকের ওই পরিচালকের। তার ব্যক্তিগত পিয়নেরও নামে-বেনামে বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে।