আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢালাওভাবে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিভিন্ন নীতি ছাড়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। আবার প্রভাবশালীরা কিস্তি না দিলেও খেলাপি দেখানো হচ্ছিল না। এখন অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি ও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণে বিশেষ পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশেজ্ঞরা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া অনেক ঋণ এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে। আগের মতো বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়েছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের মোট ঋণের যা প্রায় ১৭ শতাংশ। খেলাপি ঋণ হু-হু করে বৃদ্ধির মধ্যে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধার আবেদন জানিয়ে আসছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ছাড়ে পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল, সুদ মওকুফ ও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিরা এই সুযোগ পাবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ৃ
পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে করতে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সাম্প্রতিক আন্দোলন, অগ্নিকাণ্ড, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ প্রকৃত ক্ষতির মুখে পড়া ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণে বিশেষ পুনঃতফসিলের বিষয়গুলো কার্যপরিধির মধ্যে থাকবে।
এ কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হককে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এছাড়া সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী। অন্য তিনজন সদস্য হলেন- এফআইডির যুগ্ম সচিব ড. দেলোয়ার হোসেন, অর্থনীতিবিদ মামুন রশিদ, ব্যবসায়িক প্রতিনিধি আব্দুল হক।
বিদ্যমান ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালার বাইরে ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ নিয়মিত করার ক্ষেত্রে কী সুবিধা দেওয়া যায়, তা কমিটি যাচাই করবে। আর এ জন্য প্রথমে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রাথমিক বাছাই শেষে কমিটিতে পাঠাবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিআরপিডির অনাপত্তি নিয়ে বিশেষ সুবিধা কার্যকর হবে।
ইতোমধ্যে যেসব বড় ঋণ খেলাপি হয়েছে, পুনঃতফসিলের পরও কেন আদায় হচ্ছে না, তার কারণ পর্যালোচনা করবে কমিটি। এর বাইরে বিগত সরকারের সময় জারি করা সুদ মওকুফ, ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন, অবলোপন নীতিমালা পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। সরকার পরিবর্তনের পর গত ২৭ নভেম্বর জারি করা ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশন নীতিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে সে বিষয়েও সুপারিশ করবে এই কমিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সাধারণ নীতিমালা রয়েছে। সাম্প্রতিক আন্দোলন, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ ছাড়ের প্রয়োজন হলে যাচাই-বাছাই করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সুদ মওকুফ, ঋণ পুনঃতফসিল, শ্রেণি-করণসহ বিভিন্ন নীতি পর্যালোচনা করবে এই কমিটি।
তারা আরও বলেন, খেলাপি ঋণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বাড়ছে। আগামীতে খেলাপি আরও বাড়লে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এবং বিদেশি বিনিয়োগে প্রভাব পড়তে পারে। এ অবস্থায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।