রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের শুরু থেকে গত ৬ মাসে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২ দশমিক ২৯৮ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশিমিক ৯৮৯ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের অর্থছাড়— গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, এসময় বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ৩ দশমিক ৫৩২ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও— আগের নেওয়া ঋণের কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বিভিন্ন ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছিল ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
ঋণ পরিশোধ বাড়ার ব্যাখ্যা দিয়ে ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া অনেক বড় প্রকল্পের ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় আসল পরিশোধ শুরু হয়েছে। আবার বাজার-ভিত্তিক ঋণের সুদহারের কারণেও সুদ পরিশোধ বেড়েছে।
অপরদিকে সরকারি অর্থায়নের প্রকল্পের মতো বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নেও গতি কমেছে নতুন সরকারের সময়ে। যেমন- মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বেশকিছু বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পেরও ঠিকাদার চলে গেছে। এই প্রকল্পের মতো অনেক প্রকল্পেই নতুন পরিচালক নিয়োগ দিতে হয়েছে। অনেক প্রকল্পের বৈদেশিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও চলে গেছে। আবার বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন স্থবির হওয়ার ফলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমেছে। এসব কারণে বাস্তবায়ন কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থছাড় কমেছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পের ক্ষেত্রে সতর্কভাবে এগোচ্ছে। পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করছে। একইসঙ্গে প্রকল্পের গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রক্রিয়াকরণের কাজ করছে। একারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নতুন প্রকল্পের চুক্তি হচ্ছে ধীর গতিতে।