*নর্থস্টোন ইঞ্জিনিয়ারিং হাতিয়ে নিয়েছে ৪০০ কোটি টাকা
নর্থস্টোন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধিত হয়। নিবন্ধনের পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলে। এর দুই দিন পর দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের জন্য ৮০৭ কোটি টাকার একটি সাব-কন্ট্রাক্ট পায় এটি। পরদিনই প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ কোটি টাকার ওভারড্রাফ্ট ঋণের জন্য আবেদন করে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের পর্ষদ থেকে ঋণ অনুমোদন পায়।
এরপর ১২ কার্যদিবসের মধ্যে একটি তারিখবিহীন চেক ও নারায়ণগঞ্জের একটি জমি বন্ধক রাখার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি পুরো অর্থ উত্তোলন করে, যদিও জমির বন্ধকি দলিল তখনো প্রস্তুত হয়নি।
নিবন্ধন থেকে শুরু করে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া পর্যন্ত নর্থস্টোনের সময় লেগেছে মাত্র দেড় মাস। তাদের পরিশোধিত মূলধন ছিল মাত্র ১০ লাখ টাকা। প্রতিবেদকের আসা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশানসহ বিভিন্ন শাখা থেকে মোট ৭,১২৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এ ঋণ সুবিধা পেয়েছিল ১৪টি কোম্পানি, যার মধ্যে নর্থস্টোনও ছিল। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যাংকিং খাতকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে এ ধরনের আরও অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
আরেক কোম্পানি সার্ভ কনস্ট্রাকশন মাত্র এক মাসের মধ্যে ৪৩৫ কোটি টাকার ওভারড্রাফ্ট ঋণ পায়। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর এটি খুলনার ২০০-৩০০ মেগাওয়াটের ডুয়েল-ফুয়েল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সাব-কন্ট্রাক্ট পাওয়ার দিনেই ব্যাংকটির প্রধান শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলে। পরের বছর ১৭ জানুয়ারি তারিখে ঋণ অনুমোদনও পায় এটি। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পে-অর্ডারের বদলে পরবর্তী আট কার্যদিবসের মধ্যে বেশিরভাগ নগদ অর্থ উত্তোলন করে নেয় কোম্পানিটি।
এ দুটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন হওয়ার এক মাসের মধ্যে ঋণ অনুমোদন পেয়েছে, এবং কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তারা ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পেয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ প্রশ্ন তোলা হয়, কীভাবে মাত্র ১০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান ৮৩৫ কোটি টাকার ঋণ তুলে নিয়েছে।
কিছু প্রতিষ্ঠানের কপাল আরও ভালো ছিল। জামানত, ঋণযোগ্যতা বা ব্যবসার কার্যকারিতা যাচাই তো দূরঅস্ত, নির্ধারিত ঠিকানায় অফিস না থাকা সত্ত্বেও, তাদের ঋণ আরও বেশি দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ দেখেছে, এ ধরনের শেল কোম্পানির ঋণ অনুমোদনে আইএফআইসি ব্যাংক পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরে ব্যাংকের উপদেষ্টা) শাহ আলম থেকে 'প্রচুর চাপ' আসত।
এক কক্ষের ফার্মের জন্য ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ। এ ধরনের কোম্পানির অন্তত চারটি ঠিকানা পরিদর্শন করে কোনো অফিস বা নির্বাহী খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ প্রতিবেদক স্কাইমার্ক ইন্টারন্যাশনাল-এর নিবন্ধিত ঠিকানা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্লক এ, হাউস ২৫১-এর ৩য় তলায় অনুসন্ধান চালিয়ে কোনো অফিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। ২০২২ সালের ২৬ জুলাই স্কাইমার্কের নিবন্ধনের মাত্র সাত দিনের মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে ১৪৫ কোটি টাকার ওভারড্রাফ্ট ঋণ মঞ্জুর করে। পরে ব্যাংক প্রধান শাখা অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে মোট ৫৪৫ কোটি টাকায় ঋণের অঙ্ক পৌঁছায়। প্রতিষ্ঠানটি আমদানি-রপ্তানি, মালবাহী পরিবহন এবং পাইকারি খুচরা বিক্রয়ে জড়িত বলে দাবি করেছিল।
ব্যাংক এ ঋণের বিপরীতে কোনো জামানত রাখেনি এবং জামানতের জন্য ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু ওই ঠিকানায় একটি নতুন বহুতল ভবন ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। ভবনের তত্ত্বাবধায়ক মুরাদ আলী জানিয়েছেন, ভবনের সব অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে এবং তিনি স্কাইমার্ক বা তাদের মালিকদের কথা কখনো শোনেনইনি। স্কাইমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আবদুল্লাহ আল-মঞ্জুর এবং পরিচালক হিসেবে ইশরাত জাহান লাইজুকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। উভয়ের শেয়ারহোল্ডিং দেখানো হয়েছিল মাত্র ৫ লাখ টাকা।
ব্যাংকের আরও উদারতা: মাত্র দুটি চেয়ার ও একটি ছোট টেবিল নিয়ে প্রতি মাসে মাত্র ৫ হাজার টাকা ভাড়ার একটি অফিস থেকে পরিচালিত ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল একই ব্যাংকের শাখা থেকে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। মিরপুরের পশ্চিম কাজীপাড়ার ৭৯৬ হাজী টাওয়ার-এ নিবন্ধিত ঠিকানা পরিদর্শন করলে ভবনের মালিক জানান, সংস্থাটি এ অফিসটি নেওয়ার সময় কাজীপাড়া এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবসার দাবি করেছিল। তবে, ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধনের সময় কোম্পানিটি জানিয়েছিল, এটি আমদানি, রপ্তানি বাণিজ্য এবং বিতরণের সঙ্গে জড়িত।
ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল-এর নিবন্ধিত ঠিকানা পরিদর্শন করে কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ প্রতিবেদক ভবনের চতুর্থ তলায় মালিক মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, 'প্রায় এক বছর আগে তারা [ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল] আমার বিল্ডিংয়ের একটি ছোট রুম মাসিক ৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিল। তারা বলেছিল, এখান থেকে কাজীপাড়া এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা পরিচালনা করবে।' তিনি আরও বলেন, 'তারা সাত-আট মাস অফিস চালিয়েছিল। ভেতরে ছিল মাত্র দুটি চেয়ার ও একটি ছোট টেবিল। এ সময়ে অফিস মোটামুটি ১৪ বার খোলা হয়েছে, অল্পকিছু লোক যাতায়াত করত। জুলাই মাসের বিক্ষোভের ঠিক আগে তারা অফিস বন্ধ করে চলে যায়।'
মাজহারুল ইসলাম আরও জানান, 'সম্প্রতি কিছু ব্যাংকের প্রতিনিধি এখানে এসে তাদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো ১-২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কিন্তু এখন শুনছি তারা ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে! এ ধরনের প্রতারকদের কারণেই আমাদের দেশে এ অবস্থা।'
ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বংশাল রোডের মুকিম বাজারের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং পরিচালক হিসেবে আজমপুর ব্র্যাক মার্কেটের বিবি মরিয়াম মিস্টি নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে।
একইভাবে, গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডও আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে ঋণ পেয়েছিল। এ কোম্পানিটি ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ-এ নিবন্ধিত হয়েছিল।
তালিকাভুক্ত নথিতে দেখা গেছে, কোম্পানিটি নির্মাণ, প্রকৌশল ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে ব্যাংকের কাছে তাদের ৬২০ কোটি টাকা ঋণ বকেয়া রয়েছে। তাদের নিবন্ধিত ঠিকানা ১২৯ গ্রিন ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার, লেক সার্কাস, কলাবাগান।
কলাবাগানের এ ঠিকানায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সেখানে একটি বহুতল ভবন রয়েছে। ভবনের নিরাপত্তা কর্মী মোহাম্মদ মিয়া এবং ব্যবস্থাপক রাকিব নিশ্চিত করেছেন, এখানে গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে কোনো কোম্পানি নেই। ভবনের প্রতিটি তলা খুঁজেও এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেখানে আরেকটি নির্মাণ কোম্পানি থাকলেও তারা গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড-এর নাম শোনেনি। এছাড়া, আলফা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিল। কোম্পানিটি ২০২২ সালের ৭ জুন নিবন্ধিত হয়েছিল। নিবন্ধনের মাত্র ১৩ দিনের মধ্যেই তারা ৮৫ কোটি টাকার ঋণ পায়। তাদের নিবন্ধিত ঠিকানা রামপুরার ওয়াপদা রোড হলেও সেখানে গিয়ে কোনো অফিসের অস্তিত্ব মেলেনি। রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, 'প্রয়োজনীয় ফি ও নথিপত্র জমা দিয়ে যে কেউ একটি কোম্পানি নিবন্ধন করতে পারে। আমরা সাইট পরিদর্শন করে কোম্পানির বাস্তব অস্তিত্ব যাচাই করি না। এটি আমাদের কাজের পরিধির মধ্যে পড়ে না।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় একাধিক অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে, শেল কোম্পানিগুলোকে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব কোম্পানি অবস্থান, যন্ত্রপাতি, কার্যক্রম, স্টক রিপোর্ট, জামানত এবং কর্মচারী যাচাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের ঋণ হিসাবে কোনো পূর্ববর্তী লেনদেন ছিল না, এবং যথাযথ বিশ্লেষণ ছাড়াই ঋণের সীমা বাড়ানো হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন। সরকার আইএফআইসি ব্যাংকের ৩২.৭৫% শেয়ারের মালিক। অন্যদিকে সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে যৌথভাবে ব্যাংকটির ৪.১১% শেয়ারের মালিক। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে এবং সেপ্টেম্বরের শুরুতে একটি নতুন বোর্ড গঠন করে। এর ফলে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারান সালমান। বর্তমানে তিনি অর্থ পাচারের অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন।
আইএফআইসি ব্যাংকের অনুরূপ প্রতারণামূলক ঋণ কার্যক্রমে জড়িত অন্যান্য কিছু কোম্পানির কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ৬২০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ পেয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা ঋণ। গুলশান শাখা থেকে ব্লু মুন ট্রেডিং পেয়েছে ৬০০ কোটি টাকা, এবং অ্যাক্সিস বিজনেস লিমিটেড পেয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা। এছাড়া, নর্থস্টোন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড পেয়েছে ৪৩৮ কোটি টাকা, সার্ভ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড পেয়েছে ৪৪৪ কোটি টাকা, এবং কসমস কমোডিটিস লিমিটেড পেয়েছে ৬১২ কোটি টাকা। এর বাইরে ফার ইস্ট বিজনেস ৬১৪ কোটি টাকা, সানস্টার বিজনেস ৬১৫ কোটি টাকা, ব্রাইটস্টার বিজনেস লিমিটেড ১৬৫ কোটি টাকা, এলট্রন ট্রেডিং লিমিটেড ৪৪৯ কোটি টাকা এবং আলফা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা ব্লু মুন ট্রেডিং লিমিটেডের জন্য ১,২৬৭ কোটি টাকার কার্যাদেশের ভিত্তিতে ৬০০ কোটি টাকার ওভারড্রাফট ঋণ অনুমোদন করেছে।
ব্যাংকটি ঋণের জামানত হিসেবে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ধনুয়া মৌজা এলাকায় ৮.৫ একর জমি বন্ধক রাখার জন্য ২৫.৫ কোটি টাকার ছয় মাসের স্থগিতাদেশ অনুমোদন করেছে। আর্থিক বিবৃতি, পরিশোধ ক্ষমতা এবং আর্থিক সূচক অসন্তোষজনক থাকা সত্ত্বেও, আইএফআইসি ব্যাংক কোম্পানির আর্থিক বিবরণী যাচাই না করেই ঋণ অনুমোদন করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কসমস কমোডিটিস লিমিটেড, ফারইস্ট বিজনেস লিমিটেড এবং সানস্টার বিজনেস লিমিটেড মিলে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে মোট ১,৮৪১ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। এ তিনটি কোম্পানি ২০২২ সালের জুন মাসে নিবন্ধিত হয়েছিল এবং ঋণের জন্য জামানত হিসেবে গাজীপুর সদর ও শ্রীপুরে তৃতীয় পক্ষের মালিকানাধীন সম্পত্তি দেখিয়েছিল। তবে, এ বন্ধকি প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এ তিনটি কোম্পানির জন্য ব্যবসায়িক ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছিল মতিঝিলের আরএস বিল্ডিং।
এসব ঋণ নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের বিবৃতি : ছয়টি প্রতারক কোম্পানিকে ঋণ বিতরণের সময় আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান শাখার প্রধান ব্যবস্থাপক ছিলেন হোসেন শাহ আলী। তিনি এখনও একই পদে রয়েছেন। প্রাথমিক ঋণ বিতরণের সময় সৈয়দ মনসুর মোস্তফা উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান ঋণ কর্মকর্তা ছিলেন। এসব কোম্পানিকে দ্বিতীয় দফায় ঋণ দেওয়ার সময় তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৫ আগস্ট ব্যাংকের পর্ষদে রদবদল হলেও তিনি এখনও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বহাল রয়েছেন। এসব ঋণের বিষয়ে জানতে টিবিএস প্রতিবেদক আইএফআইসি ব্যাংকে গেলেও তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। ব্যাংকের পক্ষে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং শাখা ব্যবসার প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করছে এবং আরও পরিদর্শন করবে। তারা ইতোমধ্যে আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারা ঋণ পেয়েছে তা আমরা প্রকাশ করতে পারব না।' তিনি বলেন, 'যারা এ ঋণ অনুমোদন করেছেন তারা এখনও সংশ্লিষ্ট বিভাগে কাজ করছেন। যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে তাদের অপসারণের সুপারিশ করা হয়, তবে অবশ্যই তাদের বরখাস্ত করা হবে।' রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তদন্তও চলছে। সালমান এফ রহমান এসব ঋণের সঙ্গে জড়িত কি না তা নিশ্চিত করতে পারছি না।'
২০১৫ সাল থেকে সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন। এ সময় আইএফআইসি থেকে ব্যাংক খেকো হাতিয়ে নিয়েছে ৭,১২৯ কোটি টাকা
সম্পাদক ও প্রকাশক: জোনায়েদ মানসুর, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৫৬ পুরানা পল্টন, ঢাকা -১০০০। রেজিস্টার্ড : ২৯২ ভূইয়া পাড়া প্রধান সড়ক, খিলগাঁও, ঢাকা- ১২১৯। সম্পাদকীয়: ০১৭৮৯৪২১৪৪৪, বার্তাকক্ষ : ০১৯১৩৫৫৫৩৭১। ই-মেইল: inextpr@gmail.com , (বিজ্ঞাপন), newsuddokta@gmail.com (বার্তাকক্ষ)