তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ‘সম্মিলিত পরিষদ’ তাদের দলনেতা ঘোষণা করেছে। এবারের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দেবেন চৈতি গার্মেন্টস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে আসন্ন বিজিএমইএ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার ঘোষণা অনুষ্ঠানে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন সম্মিলিত পরিষদের নেতারা।
সর্বশেষ, এই প্যানেল থেকেই বিজিএমইএর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকা অপর প্যানেল ‘ফোরাম’ও তাদের প্যানেল লিডার ঘোষণা করে।
এবারের ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু।
অনুষ্ঠানে সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, ‘বিজিএমইএ’তে যাতে আর বৈষম্য না হয়। সম্মিলিত পরিষদ যাতে বিজয়ী হয়। সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার আবুল কালামের সেই যোগ্যতা রয়েছে।’
সম্মলিত পরিষদের প্যানেল লিডার পরিচিতি অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘সম্মিলিত পরিষদ বিজিএমইএতে সবচেয়ে বেশি সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের প্যানেলের সফলতা অনেক। এবারের নির্বাচনেও সম্মিলিত পরিষদকে পূর্ণ প্যানেলে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন সেটিই প্রত্যাশা করছি।’
বিজিএমইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘সর্বশেষ মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ২৫০টি গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার ষড়যন্ত্র চলছে। কেন ২৫০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, তা খুঁজে বের করতে হবে। আমরা আশা করি পোশাক খাতের এই সমস্যা দূর করতে সম্মিলিত পরিষদকে আবারও পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচিত করবেন।’ ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, কালামের নেতৃত্ব গার্মেন্টস সেক্টরের আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং রপ্তানি আয়ের নতুন উচ্চতা অর্জনে সহায়তা করবে। এসময় তারা ১৯৭৮ সালের জুলাই থেকে এই অ্যাসোসিয়েশনের ৪৬ বছরের যাত্রায়, ২০ জন সভাপতি পেয়েছেন তারা। এদের মধ্যে ১৬ জন সভাপতি সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
আমরা (বিজিএমইএ) ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনাও তৈরি করেছি। এই রোডম্যাপটি স্বল্প-মেয়াদী, মধ্য-মেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদে সেক্টরাল প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা চিহ্নিত করেছেন বলে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন সেক্টরের এই লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি বৈশ্বিক ও স্থানীয় উভয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শক্তিশালী নেতৃত্বের জরুরি প্রয়োজন আর সম্মিলিত পরিষদের রয়েছে এই ধরনের নেতৃত্ব দানের সক্ষমতা।
প্যানেল লিডার আবুল কালাম বলেন, “এই মুহূর্তে এই খাতের জন্য স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা, রপ্তানি কার্যক্রম টিকিয়ে রাখার জন্য বাংকের আর্থিক সহায়তা এবং শিল্পকে সচল রাখতে গ্যাস ও বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ প্রয়োজন।”
তিনি যোগ করেন, “বিজিএমইর সদস্যরা যদি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের প্যানেলকে নির্বাচিত করেন তা হলে আমরা আশাবাদী যে, সরকারের সহায়তায় আমরা সমাধান খুঁজে বের করবো। তিনি বলেন, “সম্মিলিত পরিষদ ধারাবাহিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করে, বিভিন্ন সংকট কাটিয়ে ওঠতে এর অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রেদোয়ান আহমেদ, সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে, গত ২০ অক্টোবর একাধিক অভিযোগে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মূলত বিদায়ী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা এর নেতৃত্বে ছিলেন। গত মার্চের অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ থেকে সভাপতি হন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। আওয়ামী সরকার পতনের পর ব্যক্তিগত অসুস্থতায় অপরাগতার কথা জানিয়ে পদত্যাগ করে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি।
কচির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও হয়েছে। আর পর্ষদ ভেঙে ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
আবুল কালাম: সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার হলেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম। কালাম বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ও এর আগে ২০১২-১৩ মেয়াদে বিজিএমইএর পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া তিনি ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ মেয়াদে উত্তরা ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।