480
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  5. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  6. উদ্যোক্তা
  7. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  8. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  9. গণমাধ্যম
  10. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  11. জনশক্তি ও পর্যটন
  12. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  13. জাতীয়
  14. ডিএস‌ই- সিএস‌ই-বিএস‌ইসি
  15. নগরজীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

`পূবালী ব্যাংক ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখছে’

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ডেস্ক
অক্টোবর ৩১, ২০২৪ ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মোহাম্মদ আলী। দায়িত্ব পালন করছেন পূবালী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে। এর আগে ব্যাংকটির এএমডি ও ডিএমডি হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এ ব্যাংকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিও নিয়েছেন। পূবালী ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংক খাতের নানা সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন।

উবা : পূবালী ব্যাংকের বর্তমান আর্থিক চিত্র সম্পর্কে জানতে চাই।

মোহাম্মদ আলী: চলতি বছর পূবালী ব্যাংকের বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি দেশের ব্যাংক খাতের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধিও এর কাছাকাছি। আমদানি-রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। আর পরিচালন মুনাফার প্রবৃদ্ধিও হয়েছে ৫০ শতাংশ। ১৫ বছর আগে পূবালী ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন প্রতি বছরই আমাদের ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাড়ছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে পূবালী ব্যাংকে আমানতের স্থিতি ছিল ৬৭ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। একই সময়ে ৫৯ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা ছিল আমাদের ঋণ স্থিতি। পাশাপাশি সরকারি বিল-বন্ডসহ অন্যান্য খাতে ১৯ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর শেষে পূবালী ব্যাংকের মোট সম্পদের আকার ছিল ৯২ হাজার ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে পূবালী ব্যাংক ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফায় ছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আমরা ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছি।

উবা : দেশের ব্যাংক খাত যখন ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পার করছে, তখন পূবালী ব্যাংক ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?

মোহাম্মদ আলী: হ্যাঁ, চলতি বছরই পূবালী ব্যাংক ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখছে। আমি বিশ্বাস করি, ব্যাংকের ব্যবসা নির্ভর করে বিশ্বাস বা আস্থার ওপর। বিশ্বাসের কারণেই মানুষ যেকোনো ব্যাংকে আমানত রাখে। সে বিশ্বাসে যাতে কোনো চিড় না ধরে, আমরা সবসময় সে চেষ্টাই করেছি। এখন সেটিরই ফল পাচ্ছি। যখন পুরো খাত অনাস্থার মধ্যে পড়ে, তখন যদি আপনি আস্থা অর্জন করতে পারেন, সেটি ব্র্যান্ড ভ্যালুকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। পূবালী ব্যাংকের পোর্টফোলিওতে আমরা সেটিরই প্রতিফলন দেখছি। আমাদের ইসলামী ব্যাংকিং উইংয়ের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯০ শতাংশেরও বেশি।
আমাদের কাছে বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠান ডেসকোর কালেকশন অ্যাকাউন্ট আছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো সময়ে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। তারা দেখে, এত বড় চেক ব্যাংকের শাখায় পাঠালেই ডেবিট হয়ে যায়। এজন্য প্রধান কার্যালয়ের কোনো অনুমোদনেরও প্রয়োজন হয় না। অথচ দেশের অন্য কোনো ব্যাংকে এখন ৫-৭ কোটি টাকার চেক পাঠাতে হলে সাতদিন আগে জানাতে হচ্ছে।

উবা : এ মুহূর্তে বড় প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতের জন্য পূবালী ব্যাংকের বিপদের ঝুঁকি তৈরি করছে কিনা?

মোহাম্মদ আলী: না, সে ধরনের কোনো ঝুঁকি দেখছি না। কারণ আমরা ব্যাংকের বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর ভারসাম্য রক্ষা করছি। যে আমানত আমরা পাচ্ছি, তার একটি অংশ ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছি। এর অংশ আমরা ঋণ হিসেবে দিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রেও আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কোনো বিলাসী পণ্য উৎপাদন কিংবা বিপণনে আমরা ঋণ দিচ্ছি না। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে ঋণ দিচ্ছি। গ্রামাঞ্চলে কাঁচা-পাকা বাড়ি নির্মাণেও আমরা ঋণ দিচ্ছি। শিক্ষা-চিকিৎসা খাতেও আমাদের ঋণ যাচ্ছে। আমরা দেখছি, ১৮ কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদানির্ভর খাতগুলোয় ঋণ দিতে পারলে আমাদের বিনিয়োগ সফল। এসব ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কম। কেউ যদি এখন এসে বলে, আমি স্বর্ণের পরিশোধানাগার বানাতে চাই, তাহলে সে পূবালী ব্যাংক থেকে ঋণ পাবে না। সেটি যতই লাভজনক খাত হোক না কেন?

অনেক পুরনো ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও পূবালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ খুবই কম। এ মুহূর্তে আমাদের খেলাপি ঋণের হার মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। খেলাপি হওয়া এ ঋণও অনেক আগের। গত পাঁচ বছরে আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদন দেয়া কোনো ঋণই খেলাপি হয়নি।

উবা : ব্যাংকের তারল্য সংকটের প্রভাবে দেশের এসএমই ও কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। তারল্য উদ্বৃত্ত থাকা পূবালী ব্যাংক ঋণবঞ্চিত উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে কী উদ্যোগ নিচ্ছে?

মোহাম্মদ আলী: ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আমরা এখন এসএমই, রিটেইল ও কৃষিকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। রিটেইলের ক্ষেত্রেও আমরা ব্যক্তিগত ঋণ দিচ্ছি না। এক্ষেত্রেও আমরা গ্রামীণ বাড়ি নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। গ্রামের একটি টিনের বাড়ি আর সেমি পাকা বাড়ির তাপমাত্রায় অনেক ব্যবধান। এসএমই ও রিটেইল ঋণ দেয়ার জন্য আমরা পূবালী ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় দুজন কর্মকর্তাকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। তাদের কাজই হলো এ খাতে ঋণের মার্কেটিং করা। এসএমই খাতে সঠিক উদ্যোক্তা চিহ্নিত করে ঋণ দিলে তা খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি খুবই কম। এ মুহূর্তে পূবালী ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিওতে এসএমইর অংশ ২৬ শতাংশ।

তবে আগামী বছর থেকে আমরা করপোরেট ঋণের মার্কেটিং পুরোপুরি বন্ধও করে দিতে পারি। এক্ষেত্রে কেবল ট্রিপল এ রেটিংপ্রাপ্ত কিছু প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেব। বাকি ঋণের পুরোটাই এসএমই, রিটেইল ও কৃষি খাতে যাবে। এসএমই হলো যেকোনো ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিওর শক্তি। এ খাতের কিছু উদ্যোক্তা খেলাপি হলেও ব্যাংকের জন্য বড় কোনো ঝুঁকি তৈরি করেন না। বিপরীতে একটি করপোরেট গ্রাহক খেলাপি হলে ব্যাংকের খবর হয়ে যায়।

উবা : এক-দেড় দশক আগেও পূবালী ছিল সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক। কিন্তু সেখান থেকে পূবালী এখন সেরা ব্যাংকগুলোর একটি। এ রূপান্তর কীভাবে ঘটল?

মোহাম্মদ আলী: পূবালী ব্যাংকের পথচলা ৬৫ বছরের। দীর্ঘ এ যাত্রায় অনেক চড়াই-উতরাই ছিল। ১৯৫৯ সালে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নামে কার্যক্রম শুরুর সময়ে এটি ছিল বেসরকারি ব্যাংক। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জাতীয়করণের কারণে এটি সরকারি ব্যাংক হয়ে যায়। আর নামকরণ করা হয় পূবালী ব্যাংক। ১৯৮৩ সালে এটিকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে এ ব্যাংক ভালো-খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। খারাপ অবস্থা থেকে ভালো ব্যাংকে রূপান্তরের ক্ষেত্রে করপোরেট সুশাসন বড় ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে কাজ করেছে। পর্ষদ ব্যাংকের নীতি প্রণয়ন করেছে। আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সে নীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছে। এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ধাপে স্বাধীনতা আছে। প্রতিটি শাখাও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। শাখা, অঞ্চলসহ প্রতিটি ধাপের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয় থেকে যেকোনো ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সুশাসন ছাড়াও সততা, নৈতিকতা ও কমপ্লায়েন্সের সমন্বয়ে ব্যাংক পরিচালনার কারণে পূবালী ব্যাংক সেরাদের কাতারে উঠে এসেছে।

উবা : আপনি বলতে চাচ্ছেন, যেকোনো ব্যাংকের সাফল্যের প্রধান সূত্র হলো সুশাসন?

মোহাম্মদ আলী: অবশ্যই। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধানের পাশাপাশি ব্যাংকের নিজস্ব রীতিনীতি যথাযথ মেনে চলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। আর সুশাসন থাকলে কোনো ব্যাংকই খারাপ হওয়ার কথা নয়।

উবা : গত দেড় দশকে দেশের ব্যাংক ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বা অলিগার্কদের সহযোগীর ভূমিকায় ছিল। এত খারাপ সময়েও পূবালী ব্যাংক ভালোর পথে এগোল কীভাবে?

মোহাম্মদ আলী: আমরা সবসময়ই ব্যবসাকে প্রাধান্য দিয়েছি। আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থকে প্রকৃত অর্থেই আমরা আমানত মনে করেছি। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছি। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের নীতিতে অটল ছিলাম। এক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে চলেছি। আমি প্রায়ই বলি, পূবালী ব্যাংক অস্তিত্বহীন কোনো প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়নি। শুধু কোম্পানির সুনাম বা নামের ওপর ভিত্তি করে ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়নি। এক খাতের সেরা বা সুনামধারী কোম্পানিকে অন্য খাতের প্রজেক্টে ঋণ দিইনি। আমরা চেষ্টা করেছি ভালো গ্রাহকদের পাশে থাকার। তাদের সম্প্রসারণ ও ব্যবসায় ভূমিকা রাখার।
বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার জন্য আমাদেরও চাপ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা চাপের কাছে নত হইনি। আবার সরাসরি নাও বলে দিইনি। আমরা তাদের প্রস্তাব দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। ঋণ প্রস্তাবের দুর্বলতাগুলো ধরিয়ে দিয়েছি। সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতি না পেলে তখন বলেছি, এ প্রকল্পে ঋণ দেয়া সম্ভব নয়।

উবা : না বলে দেয়ার পর প্রভাবশালীদের কাছ থেকে চাপ আসেনি?

মোহাম্মদ আলী: হ্যাঁ, চাপ এসেছে। না বলে দেয়ার পরও কেউ তিন মাস, ছয় মাস ঘুরেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তদবির করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিবৃত্ত হয়েছে।

উবা : তার মানে রাষ্ট্র যত খারাপই হোক, যত কিছুই চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুক, ব্যাংকার যদি ভালো হন, ব্যাংক ভালো থাকবে?

মোহাম্মদ আলী: অবশ্যই। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভালো হতে হবে। এ দুই পক্ষের মধ্যে যদি সুশাসন, সততা, নৈতিকতা ও কমপ্লায়েন্স মেনে চলার মানসিকতা থাকে, তাহলে কোনো চাপেই কিছু হবে না। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিজ নিজ অধিক্ষেত্র মেনে চলতে হবে।

উবা : এক-দেড় দশক আগেও পূবালী ছিল সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক। কিন্তু সেখান থেকে পূবালী এখন সেরা ব্যাংকগুলোর একটি। এ রূপান্তর কীভাবে ঘটল?

মোহাম্মদ আলী: পূবালী ব্যাংকের পথচলা ৬৫ বছরের। দীর্ঘ এ যাত্রায় অনেক চড়াই-উতরাই ছিল। ১৯৫৯ সালে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নামে কার্যক্রম শুরুর সময়ে এটি ছিল বেসরকারি ব্যাংক। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জাতীয়করণের কারণে এটি সরকারি ব্যাংক হয়ে যায়। আর নামকরণ করা হয় পূবালী ব্যাংক। ১৯৮৩ সালে এটিকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে এ ব্যাংক ভালো-খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। খারাপ অবস্থা থেকে ভালো ব্যাংকে রূপান্তরের ক্ষেত্রে করপোরেট সুশাসন বড় ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে কাজ করেছে। পর্ষদ ব্যাংকের নীতি প্রণয়ন করেছে। আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সে নীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছে। এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ধাপে স্বাধীনতা আছে। প্রতিটি শাখাও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। শাখা, অঞ্চলসহ প্রতিটি ধাপের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয় থেকে যেকোনো ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সুশাসন ছাড়াও সততা, নৈতিকতা ও কমপ্লায়েন্সের সমন্বয়ে ব্যাংক পরিচালনার কারণে পূবালী ব্যাংক সেরাদের কাতারে উঠে এসেছে।

উবা : আপনি বলতে চাচ্ছেন, যেকোনো ব্যাংকের সাফল্যের প্রধান সূত্র হলো সুশাসন?

মোহাম্মদ আলী: অবশ্যই। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধানের পাশাপাশি ব্যাংকের নিজস্ব রীতিনীতি যথাযথ মেনে চলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। আর সুশাসন থাকলে কোনো ব্যাংকই খারাপ হওয়ার কথা নয়।

উবা : গত দেড় দশকে দেশের ব্যাংক ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বা অলিগার্কদের সহযোগীর ভূমিকায় ছিল। এত খারাপ সময়েও পূবালী ব্যাংক ভালোর পথে এগোল কীভাবে?

মোহাম্মদ আলী: আমরা সবসময়ই ব্যবসাকে প্রাধান্য দিয়েছি। আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থকে প্রকৃত অর্থেই আমরা আমানত মনে করেছি। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছি। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের নীতিতে অটল ছিলাম। এক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে চলেছি। আমি প্রায়ই বলি, পূবালী ব্যাংক অস্তিত্বহীন কোনো প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়নি। শুধু কোম্পানির সুনাম বা নামের ওপর ভিত্তি করে ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়নি। এক খাতের সেরা বা সুনামধারী কোম্পানিকে অন্য খাতের প্রজেক্টে ঋণ দিইনি। আমরা চেষ্টা করেছি ভালো গ্রাহকদের পাশে থাকার। তাদের সম্প্রসারণ ও ব্যবসায় ভূমিকা রাখার।
বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার জন্য আমাদেরও চাপ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা চাপের কাছে নত হইনি। আবার সরাসরি নাও বলে দিইনি। আমরা তাদের প্রস্তাব দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। ঋণ প্রস্তাবের দুর্বলতাগুলো ধরিয়ে দিয়েছি। সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতি না পেলে তখন বলেছি, এ প্রকল্পে ঋণ দেয়া সম্ভব নয়।

উবা : না বলে দেয়ার পর প্রভাবশালীদের কাছ থেকে চাপ আসেনি?

মোহাম্মদ আলী: হ্যাঁ, চাপ এসেছে। না বলে দেয়ার পরও কেউ তিন মাস, ছয় মাস ঘুরেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তদবির করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিবৃত্ত হয়েছে।

উবা : তার মানে রাষ্ট্র যত খারাপই হোক, যত কিছুই চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুক, ব্যাংকার যদি ভালো হন, ব্যাংক ভালো থাকবে?

মোহাম্মদ আলী: অবশ্যই। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভালো হতে হবে। এ দুই পক্ষের মধ্যে যদি সুশাসন, সততা, নৈতিকতা ও কমপ্লায়েন্স মেনে চলার মানসিকতা থাকে, তাহলে কোনো চাপেই কিছু হবে না। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিজ নিজ অধিক্ষেত্র মেনে চলতে হবে।

উবা : পূবালী ব্যাংকের গ্রাহকদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী?

মোহাম্মদ আলী: আমরা গ্রাহকদের ‘লাইফ লং’ সেবা দিতে চাই। এজন্য পূবালী ব্যাংকের প্রতিটি বিভাগ ঢেলে সাজানো হয়েছে। আধুনিক সব প্রযুক্তির সম্মিলনে আমরা ব্যাংকের সেবায় সন্নিবেশ করেছি। ব্যাংকের কর্মীদের সৎ, যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা বলছি, ‘এমপ্লয়ি ফার্স্ট’ বা কর্মীই সবার আগে। এজন্য কর্মীদের বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা দেখছি, এখন আর পূবালী ব্যাংকের কোনো কর্মী চাকরি ছেড়ে অন্য ব্যাংকে যাচ্ছেন না। এটি ব্যাংকের বড় শক্তি। ব্যাংকের সব শাখাকেও গ্রাহক সন্তুষ্টির কথা বিবেচনা করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। গ্রাহকদের উদ্দেশে আমার বার্তা হলো আপনার কষ্টার্জিত টাকা কোথায় রাখছেন, সেটি জেনে-বুঝে রাখেন। ওই ব্যাংকে সুশাসন আছে কিনা, মালিকানায় কারা আছে, সেটিও জেনে নিন। ঋণগ্রহীতা হলে আপনার প্রয়োজনের সময় ব্যাংক টাকা দিতে পারবে কিনা সেটি বিবেচনায় রাখুন। এখন এসব বিষয় উপলব্ধি করার সময় এসেছে। গ্রাহক সচেতন হলে আমানত নিশ্চিত হবে। ব্যাংকও ভালো হতে বাধ্য হবে। দেশও উপকৃত হবে। সূত্র : বণিক বার্তা