480
ঢাকাবুধবার , ১০ জুলাই ২০২৪
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  5. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  6. উদ্যোক্তা
  7. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  8. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  9. গণমাধ্যম
  10. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  11. জনশক্তি ও পর্যটন
  12. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  13. জাতীয়
  14. ডিএস‌ই- সিএস‌ই-বিএস‌ইসি
  15. নগরজীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পোশাকশিল্পের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে: আশিকুর রহমান (তুহিন)

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
আশিকুর রহমান (তুহিন)
জুলাই ১০, ২০২৪ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

করোনা মহামারি পরবর্তী নাজুক বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক সেই মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবার বিশ্ব অর্থনীতির দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। এর অভিঘাত আমরাও এড়াতে পারিনি। যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়। উন্নয়নশীল দেশ থেকে শুরু করে উন্নত বিশ্ব-সবত্রই জীবন যাত্রার বধিত ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় খরচের লাগাম টানতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণে এ পদক্ষেপে ভোগক্ষমতা কমে আসে। ব্যয়ে সাশ্রয়ী হতে অনেকেই পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য কেনার খরচ কমাতে বাধ্য হয় মার্কিনিরা। এতে পোশাকের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। যার প্রভাব পড়ে আমাদের প্রধান পণ্য রপ্তানিতে। এক বছরে দেশটিতে রপ্তানি কমে যায় ২৫ শতাংশ।

তবে আশার কথা হচ্ছে যে, ইউরোপ এবং আমরিকায় মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। ইউরোপে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে আমেরিকায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশরে নিচে নেমে এসেছে। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে যে, সামনের মাসগুলোতে পোশাকের রপ্তানি আদেশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থাভেদে পোশাকের চাহিদা কম-বেশি হওয়াটা যে একটি স্বাভাবিক ব্যপার এটি কারও অজানা নয়। তবে বিশ্বব্যাপী পোশাকের বৈচিত্র্য, ধরণ, ক্রেতার রুচি, প্রবণতা এবং পাশাপাশি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ছোঁয়া, পণ্যের উৎকর্ষ ইত্যাদিতে যেভাবে পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে তাতে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আগামী দিনগুলোতে টিকে থাকতে হলে এবং ভালো করতে হলে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। সন্দেহ নেই ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে পোশাক শিল্পে তৈরি হয়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ। তবে এটাও বাস্তব যে, এ সকল চ্যালেঞ্জসমূহকে সুযোগেও রূপান্তর করা সম্ভব। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন বিনিয়োগ দরকার, তেমনি প্রয়োজন দক্ষ জনবল। বিষয়টি অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু এর মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থায় সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব যার ফলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং দেশ উভয়ই লাভবান হতে পারে।
কাজেই আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য যেমন অনেক চ্যালেঞ্জে রয়েছে, তেমনি আমাদের জন্য অনেক ভালো সুযোগ ও সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার রূপকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। তবে এ রূপকল্প বাস্তবায়নে আমাদের বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর গভীর মনোযোগ দিতে হবে।

১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্র অর্জনে আমাদেরকে উচ্চ মূল্যের বিশেষকরে মেনমেইড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক উৎপাদনের আরে বেশি দিকে নজর দিতে হবে। এ ধরণের পোশাক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি। আমাদের পোশাক উদ্যোক্তাদের অনেকেই উচ্চ মূল্যের পোশাক উৎপাদনের জন্য যন্ত্র ও প্রযুক্তি আধুনিকায়নে বিনিয়োগ করছেন। এরসঙ্গে উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরির জন্য কারখানাগুলোতে নিজস্ব ডিজাইন ষ্টুডিও স্থাপন করতে হবে। অবশ্য, ইতিমধ্যে কিছু কিছু পোশাক প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ডিজাইন ষ্টুডিও করেছে। তবে এ সংখ্য আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে প্রযুক্তি ব্যপকহারে পরিবর্তিত হচ্ছে। পোশাক শিল্পেও এ পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। দিন দিন উন্নতর জ্বালানী সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি বাজারে আসছে। তবে এ সকল যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য আমাদের প্রয়োজন দক্ষ জনবল। যার এখনো প্রবল ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পুরণে আমাদের জনবলের দক্ষতা উন্নয়নে স্কিলিং, রিস্কিলিং এবং আপস্কিলিংয়ের মাধ্যমে জনবলকে পরিবর্তিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। দক্ষ ফ্যাশন ডিজাইনার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারসহ পোশাক শিল্পে প্রয়োজনীয় জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।

যেহেতু আমরা কৃত্রিম তন্তু ভিত্তিক উচ্চ মূল্যের পোশাকের উপর বেশি নজর দিচ্ছি, তাই আমাদের বস্ত্রখাতে এ ধরণের তন্তু ভিত্তিক কাপড় উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে বিশেষকরে ওভেন খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে। যাতে ওভেন বস্ত্র আমদানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি শিল্পের চাহিদা আমরা নিজেরাই পূরণ করতে পারি।

সাম্প্রতিক সময় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা রপ্তানি খাতের জন্য ইতিবাচক। তবে আমাদের পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা অজণে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।

একই সঙ্গে আমাদেরকে সাসটেইনেবিলিটির দিকেও বেশ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ,এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অগ্রগতির চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে। বর্তমান বিশ্বে ভোক্তারা পরিবেশের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। তারা কোথায় এবং কিভাবে পোশাক তৈরি করা হয় সে ব্যপারে জানতে চায়। ফলে ব্র্যান্ড ক্রেতারা সাসটেইনবিলিটির দিকে ক্রমেই গুরত্ব বাড়াচ্ছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি রিসাইক্লিং হাব হিসাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে আমাদের শিল্পে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে যা আমাদের শিল্পের জন্য ইতিবাচক পরিবতন নিয়ে আসবে। আরেকটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, ইনোভেশন বা উদ্ভাবন এর দিকে আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। কারণ বর্তমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এবং প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত উন্নয়নের সময় আমাদের শিল্পকে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে নিরবচ্ছিন্ন ও সহনীয় মূল্যে জ্বালানির নিশ্চয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে দীর্ঘমেয়াদে শিল্পে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক। কারণ একজন বিনিয়োগকারী জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দ্রুত নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি এবং আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে।

শিল্পের বিকাশ, উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহজে ব্যবসায় পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোর আরো সহজীকরণ করা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের চাহিদা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। পাশাপাশি নিত্য নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ব্যবসার গতিশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাতে তাল মিলিয়ে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোর আরো সহজীকরণ করা শিল্পের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সরকাররে নীতি নির্ধারণী পযায়ে বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিলে পোশাক শিল্প ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে। পোশাক শিল্পের অনবদ্য অগ্রযাত্রা দেশকে আরও মর্যাদাপূর্ণ আসনে নিয়ে যাবে সে কথা নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক- ট্যাড গ্রুপ এবং সাবেক পরিচালক বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।