480
ঢাকাবুধবার , ৮ মে ২০২৪
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  5. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  6. উদ্যোক্তা
  7. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  8. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  9. গণমাধ্যম
  10. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  11. জনশক্তি ও পর্যটন
  12. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  13. জাতীয়
  14. ডিএস‌ই- সিএস‌ই-বিএস‌ইসি
  15. নগরজীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নেতৃত্বের মননশীলতা: ড. রফিকুল ইসলাম 

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
ড. রফিকুল ইসলাম, অতিথি লেখক
মে ৮, ২০২৪ ৯:৩০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নেতৃত্ব নিয়ে কিছু কথা বলতেই পারি। সঠিক নেতৃত্বের প্রভাবে একটি পরিবার, প্রতিষ্ঠান, দেশ এমনকি বিশ্বও বদলে যেতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাস আসলে নেতৃত্বের ইতিহাস। একজন যোগ্য নেতা ও তাঁর নেতৃত্বের হাত ধরে একটি নতুন সভ্যতার জন্ম হতে পারে, শুরু হতে পারে নতুন যুগের সূচনা।

মানুষের মাঝে যদি সঠিক নেতৃত্ব গুণাবলী থাকে তাহলে তার জীবন খুব সহজেই বদলে যেতে পারে। এবং কি সঠিক নেতৃত্বের ফলে একটি পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দেশ এমনকি সারা বিশ্ব বদলে যেতে পারে। দেশের উন্নতি তখনই হয় যখন একজন যোগ্য নেতা নেতৃত্ব দেয়। একজন যোগ্য নেতা সব সময় সঠিক নেতৃত্বই দিবেন। নেতৃত্ব নিয়ে অনেকেই অনলাইনে উক্তি স্ট্যাটাস ও কবিতা অনুসন্ধান করেন। আজকের এই পোস্ট থেকে নেতৃত্ব নিয়ে উক্তি স্ট্যাটাস ও কবিতা জানতে পারবেন।

জীবনে সঠিক নেতৃত্ব পাওয়াটা অনেক প্রয়োজন। কেননা সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী যদি একজন ব্যক্তির মাঝে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি সবসময় উন্নতির দিকেই এগিয়ে যাবে। আর যদি একজন ব্যক্তির মাঝে সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী না থাকে তাহলে সে জীবনে ভালো কিছু অর্জন করতে পারবে না।

শিক্ষা হল নেতৃত্বের জননী। নেতৃত্ব হল প্রভাব বিস্তার করা। যেখানে নেতৃত্ব নেই, সেখানে মানুষ ধ্বংস হয়। নেতৃত্ব এবং শিক্ষা একে অপরের জন্য অপরিহার্য। নেতৃত্ব হল গড়পড়তার চেয়ে বেশি কিছু হওয়ার চ্যালেঞ্জ। নেতৃত্ব হল দৃষ্টিকোণকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা। নেতৃত্ব হল দায়িত্ব নেওয়া, অজুহাত তৈরি করা নয়।

আপনি জিনিসগুলি পরিচালনা করেন; অর্থ্যাৎ আপনি মানুষকে নেতৃত্ব দেন। নেতৃত্ব হল অন্য কাউকে দিয়ে এমন কিছু করানো যা আপনি করতে চান। আমাকে নেতৃত্ব দিন। আমাকে অনুসরণ করুন বা আমার পথ থেকে সরে যান।

যে কখনই আনুগত্য করতে শেখেনি সে কখনো ভাল নেতৃত্ব দিতে পারে না। নেতৃত্বের চর্চা হয় যতটা না কথায় তার চেয়ে বেশি আচরণে এবং কাজে। নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য হল তিনি পথ জানেন, পথে যান এবং পথ দেখান। ব্যবস্থাপনা হল সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার দক্ষতা; নেতৃত্ব নির্ধারণ করে যে মইটি দেয়ালের সাথে ঠিক ভাবে হেলেছে কিনা। সকল সফল প্রচেষ্টার ৯০ শতাংশের চাবিকাঠি হল নেতৃত্ব। আমার কাছে নেতৃত্ব মানে কর্তব্য, সম্মান, দেশ। এর অর্থ চরিত্র, এবং সময়ের সাথে খেয়াল রাখা।

নেতৃত্ব হল একজন ব্যক্তির দৃষ্টিকে উচ্চ দর্শনে নিয়ে যাওয়া, একজন ব্যক্তির কর্মক্ষমতাকে উচ্চতর মানের দিকে উন্নীত করা, তার স্বাভাবিক সীমাবদ্ধতার বাইরে একজন ব্যক্তিত্বের নির্মাণ করা।

নেতৃত্ব মানুষকে সেখানে নিয়ে যান যেখানে সে যেতে চায়৷ আর একজন মহান নেতা মানুষকে এমন জায়গায় নিয়ে যান যেখানে তারা যেতে চায় না, কিন্তু যাওয়া উচিত। নেতৃত্ব হল একটি রাখাল বালকের মত, সে পালের পিছনে থাকে, সবচেয়ে চতুর লোককে এগিয়ে যেতে দেয়, অন্যরা অনুসরণ করে, বুঝতে পারে না যে তারা পিছন থেকে নির্দেশিত হচ্ছে। কোনো ভোটে এমনকি নির্বাচনের ফলাফলেও নেতৃত্ব পরিমাপ করা যায় না । এটি শুধুমাত্র সময়ের সুবিধার সাথে সত্যই দেখা যায়। ২০ বছরের দৃষ্টিকোণ আর ২০ দিনের দৃষ্টিকোণ এক নয়৷

একজন মানুষের মাঝে যদি সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী থাকে – তবে একদল অযোগ্য লোককেও তিনি অনেক বড় অর্জনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। নেতৃত্বের উক্তি দুর্বলের বুকে সাহস যোগায়, অবিশ্বাসীর মনে বিশ্বাসের জন্ম দেয়। মানুষ একা কিছু করতে পারে না। একজন মানুষের স্বপ্ন যত বড় – তার দলও তত বড় হতে হয়। একজন সত্যিকার নেতা তাঁর নিজের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পারেন বহু মানুষের মাঝে। নেতাকে অনুসরন করে তারা নিজের শ্রম, ঘাম – এমনকি রক্ত দিতেও দ্বিধা করে না।

আপনি জীবনের যে ক্ষেত্রেই বড় হতে চান না কেন – নেতৃত্বের গুণাবলী আপনার মাঝে থাকা আবশ্যক। বিখ্যাত নেতা, লেখক, উদ্যোক্তা, দার্শনিক ও গুণীজনরা যুগে যুগে যেসব নেতৃত্বের বানী দিয়ে গেছেন – তার মাঝে লুকিয়ে আছে নেতার গুণাবলী অর্জন করার অনেক পরামর্শ। নেতৃত্ব নিয়ে বলা সেইসব উক্তি থেকে যেন আপনিও নেতা হওয়ার অনুপ্রেরণা ও উপায় খুঁজে পান – সেকারণেই আজ আমরা আপনার সামনে নেতৃত্বের পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছি।

নেতারা নিরপেক্ষতা ও সততা দিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে। শ্রেষ্ঠ নেতা সে-ই, যার অধীনে কোনওকিছু অর্জিত হলে তার সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষই ভাবে যে তারা সবাই মিলে কাজটি করেছে। নেতৃত্ব মানে তোমার উপস্থিতিতে অন্যরা উন্নতি করবে, এবং তোমার অনুপস্থিতিতেও সেই উন্নতি বজায়ে থাকবে। যোগ্য ও শক্তিমান নেতা সবাইকে এক এক আদর্শে নিয়ে আসে।

জাহাজ বানাতে চাইলে তোমার লোকদের কাজ ভাগ করে দিয়ে নির্দেশ দিতে থাকার বদলে, তাদের সমুদ্রের অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাও। নেতাদের উচি‌ৎ তার লোকদের জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি বাড়ানোর জন্য দিক নির্দেশনা দেয়া। সব সিদ্ধান্ত নেতাদের একার নেয়া উচি‌ৎ নয়। একজন নেতা হিসেবে আমি নিজে অতিরিক্ত কষ্ট করি, যাতে অন্যরাও তা দেখে নিজের সেরাটা দিতে উ‌ৎসাহিত হয়।

নেতা হওয়ার চ্যালেঞ্জ হল শক্তিমান কিন্তু অতি কাঠখোট্টা না হওয়া; দুর্বল না হয়েও দয়াশীল হওয়া; কঠোর হয়েও অত্যাচারী না হওয়া; চিন্তাশীল হয়েও অলস না হওয়া; বিনীত হয়েও নরম না হওয়া; গর্বিত হয়েও অহঙ্কার না করা; এবং হাসিখুশি হয়েও হাসির পাত্র না হওয়া। যদি তোমার কাজ অন্যদের স্বপ্ন দেখতে, শিখতে এবং বড় কিছু হতে উ‌ৎসাহিত করে – তবে তুমি দারুন একজন নেতা। মানুষ সাহসীদের নেতা বানায়। তুমি যদি সাহস করে মানুষের অধিকারের কথা বল, তাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করো – তারা নিজেরাই তোমাকে তাদের নেতা বানাবে।

নেতারা জন্মায় না; কঠোর চেষ্টা ও ত্যাগের মাধ্যমে একজন মানুষ নেতায় পরিনত হয়। জীবনে যে কোনও বড় অর্জনের জন্যই এগুলো প্রয়োজন। নেতৃত্ব মানে বল প্রয়োগ ছাড়াই অন্যদের একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত করার ক্ষমতা। যদি কেউ সবকিছু নিজে করতে চায়, এবং সব কৃতিত্ব নিজে চায় – সে কখনো বড় নেতা হতে পারবে না।

নেতৃত্ব কোনও টাইটেল বা পদ নয়, নেতৃত্ব হল একজন মানুষের অন্যদের প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা। নেতৃত্ব মানে কঠিন সময়েও তোমার টিমকে তাদের সেরা কাজটি দিয়ে কিছু অর্জন করার জন্য অনুপ্রাণিত রাখতে পারা। সত্যিকার নেতা হওয়া মানে অন্যদের সফল হওয়ার পথ করে দেয়া এবং তাদের সফল হতে দেখা। নেতা মানে যে অন্যদের মনে আশা জাগিয়ে রাখতে পারে।

নেতৃত্ব মানে অন্যদের জীবনকে সুন্দর করার সুবর্ণ সুযোগ। এটা নিজের লালসা পূর্ণ করার সুযোগ নয়। একজন নেতার সাফল্যের ৯০% নির্ভর করে তার অনুসারীরা কি চায়। যেদিন তোমার লোকেরা তাদের সমস্যা নিয়ে তোমার কাছে আসা বন্ধ করে দেবে – সেদিনই বুঝবে তুমি নেতৃত্ব হারিয়েছো। বেশিরভাগ সময়েই সবচেয়ে জোরালো গলার লোকটি সবচেয়ে বাজে নেতা হয়; নিজের নেতৃত্বের ব্যর্থতা ঢাকতেই সে চড়া গলায় কথা বলে।

ঘৃণার কারণে মন অন্ধকার হয়ে যায়, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি কাজ করে না। নেতা হতে হলে ঘৃণা করা যাবে না। ক্ষমতাবান সে-ই, যাকে অন্যরা ক্ষমতাবান বলে বিশ্বাস করে। এটা একটা বিভ্রম, দেয়ালের গায়ে ছায়ার মত। আর একজন অতি ক্ষূদ্র মানুষের ছায়াও বিশাল হতে পারে। সত্যিকার নেতা আদর্শ খোঁজে না, সে আদর্শের জন্ম দেয়। যারা জন্মভূমির সাথে প্রতারণা করেছে, আমি তাদের অনুসরণ করি না। পাহাড় চূড়া নেতাদের অনুপ্রাণিত করে, কিন্তু সমতলেই তারা নেতায় পরিনত হয়।

একজন সত্যিকারের নেতা তার কথায় বিনয়ী, কিন্তু কাজে কর্মে অনেক সাহসী হতে হয়। একজন নেতা যদি স‌ৎ হয়, তবে তার অনুসারীরা অস‌ৎ হওয়ার সাহস পায় না। একজন নেতা সব সময় মানুষের ভালোবাসা পায়, একজন বসকে অধিনস্তরা ভয় পায়। আমার কাছে নেতার সংজ্ঞা হল, তার অবশ্যই একটি দর্শন থাকতে হবে, এবং কোনও সমস্যাতেই সে ভয় পাবে না। তার বদলে সে তা সমাধানের জন্য কাজ করবে। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল, তাকে স‌ৎ হতে হবে।

তাহলে সত্যিকারের নেতা কিভাবে হওয়া যায়, যেন সত্যিকার নেতৃত্ব কি ও কেমন হওয়া উচি‌ৎ তার একটা ধারণা আমাদের থাকা দরকার।

লেখক: গবেষক ও সমাজ সেবক