বাংলাদেশের পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৭ মে। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে সোমবার (৬ মে) সকালে আইইবি সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীর কাছে আইইবি’র গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য, দেশের প্রকৌশল উন্নয়নে অবদান তুলে ধরতে এবং ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের আয়োজন নিয়ে জানানো হয়। আগামীকাল আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আইইবি’র প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর, এমপি।
উন্নত জগত গঠন করুন’ এ সুমহান আদর্শ সামনে রেখে জাতীয় উন্নয়ন তথা দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইনস্টিটিউশন যাত্রা শুরু করে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিবেন।
সোমবার আইইবি সদর দফতরস্থ শহীদ প্রকৌশলী ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর বলেন, এই সংগঠন প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, বিশ্বের নিত্য নতুন আধুনিক প্রযুক্তির সাথে প্রকৌশলীদের পরিচয় করে দেয়া, বিদেশী প্রযুক্তিকে দেশোপযোগী করে প্রয়োগ, বিভিন্ন কারিগরি ইস্যু, উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারকে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সহযোগিতা করা এবং প্রকৌশলীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ সাধনে ইনস্টিটিউশন ৭৬ বছর ধরে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এস.এম. মনজুরুল হক মঞ্জু,কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ৭ মে আইইবি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল ১০টায় আইইবি সদর দফতর, রমনা, ঢাকা প্রাঙ্গণে জাতীয় ও আইইবি’র পতাকা উত্তোলন, শপথ গ্রহণ ও র্যালি হবে। একই দিন সারা দেশব্যাপী আইইবি’র ১৮টি কেন্দ্র, ৩৪টি উপকেন্দ্র এবং ১৪টি ওভারসীজ চ্যাপ্টারেও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী বীল মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান,,ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহাদত হোসেন শিপলু, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, প্রকৌশলী খায়রুল বাশার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. রনক আহসান, সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রতীক কুমার ঘোষ, ইঞ্জিনিয়ার অমিত কুমার চক্রবর্তী, ইঞ্জিনিয়ার মো. নাসির উদ্দিনসহ আইইবি’র বিভিন্ন সেন্টার, সাব-সেন্টারের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৩টি দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশনের সাথে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর। ৭টি প্রকৌশল বিভাগ, আইইবি নিয়ন্ত্রিত ৫টি বোর্ড দ্বারা পরিচালনা করে। এছাড়াও আইইবি’র রয়েছে বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং টাস্ক ফোর্স। দীর্ঘদিন যাবত আইইবি সাফল্যজনকভাবে এএমআইই কোর্স পরিচালনা করে আসছে যা স্নাতক ডিগ্রীর সমতুল্য। ইতোমধ্যে ৭০০টিরও বেশী স্বল্প মেয়াদী অনাবাসিক কোর্স পরিচালনা করা হয়েছে। এতে প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং অন্যান্য পেশাজীবীসহ অংশগ্রহণকারী দশ হাজারের অধিক। ৫টি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান সন্তোষজনক। এগুলো ছাড়াও আরও ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল ডিগ্রী দিচ্ছে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার গুনগত মান প্রশ্নবিদ্ধ। এ মান নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে প্রকৌশল শিক্ষা হুমকির মধ্যে পড়বে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ৬টি আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সংস্থার সদস্য। আইইবি বিশ্বস্বীকৃত ওয়াশিংটন অ্যাকয়ার্ড এর প্রভিশনাল মেম্বার, এ বছরই পূর্ণ সদস্যপদ পাবে বলে আমরা আশা করছি। আইইবি ওয়াশিংটন অ্যাকয়ার্ড – এর পূর্ণ সদস্য হলে আইইবি’র সদস্য প্রকৌশলীগণের সার্টিফিকেট বিশ্বের সকল দেশে বিনা প্রশ্নে স্বীকৃতি পাবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, আইইবি’র মূল কাজ হচ্ছে প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়ন, পেশাজীবীদের বিভিন্ন সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে কাজ করা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, আন্তর্জাতিক কারিগরি সহায়তা সুযোগ সৃষ্টি করা এবং জাতীয় কারিগরি ইস্যুতে সরকারকে পরামর্শ দেয়া। ইঞ্জিনিয়ার্স ডে উপলক্ষে ৭ মে জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। এছাড়াও আইইবির বিভিন্ন প্রকৌশল বিভাগ, কেন্দ্র/উপকেন্দ্র এবং ওভারসীস চ্যাপ্টারসমূহে মাসব্যাপী ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ এর কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দাবি জানানো হয়,
ক. এলজিইডি এখন পর্যন্ত ক্যাডারভুক্ত না হওয়ায় মেধাবী নবীন প্রকৌশলীগণ এলজিইডি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাই দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো ও সম্পদের উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে এলজিইডি’কে ক্যাডারভুক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
খ.”ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০” বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীগণসহ ওয়াটার সেক্টরে কর্মরত সকল প্রকৌশলীগণ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ পানি সম্পদ উন্নয়নে কর্মরত প্রকৌশলীগণের জন্য “বিসিএস পানি সম্পদ প্রকৌশল ক্যাডার” সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।
গ. ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় বিসিএস আইসিটি ক্যাডার বাস্তবায়ন করা জরুরি এবং ২০০৬ সাল থেকে বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের বন্ধকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঘ.দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিকে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে “টেক্সটাইল ক্যাডার” প্রবর্তনের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
ঙ. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের “সিনিয়র সার্ভিস পুল” অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিযোগের দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায়, উপ-সচিব পদের ৩০% প্রকৌশল সংস্থার জন্য সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।
স্মার্ট’ বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও ভিশন-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান- ২১০০ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকৌশল উইং গঠন করে তাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের নিযোগ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড মনিটরিং ও সমন্বয় করার ব্যবস্থা করা হলে প্রকল্পগুলো সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহজে ও যথাযথভাবে ওয়াকিবহাল হতে পারবেন।
‘বিভিন্ন প্রকল্পে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) নিযোগঃ কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য।
বিউবো’র নিয়ন্ত্রণাধীন সকল বিদ্যুৎ সেক্টরকে সমন্বিত করাঃ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) একটি সংবিধিবদ্ধ সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। “সবার সাথে সবার আগে” এই লক্ষ্য নিয়ে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রণী এবং প্রধান সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দিন রাত ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কাজে নিয়োজিত থেকে সম্মানিত বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছেন। বিউবো’র কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাঝে এপিএ বোনাস (ইনসেনটিভ বোনাস) প্রদান করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড় পত্র প্রদান না করায় বিগত ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রাপ্য এপিএ বোনাস প্রদান করা হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে বিউবো’র ১৩,৫০০ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, রাজউক ও বিসিআইসি-এর শীর্ষ পদে ইতোপূর্বে প্রকৌশলী থাকলেও বর্তমানে অপ্রকৌশলীকে পদায়ন করা হয়েছে। তাই প্রকৌশল সংস্থা এবং কোম্পানীসমূহে সার্বিক গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থা, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানীসমূহ, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন কোম্পানীসমূহ এবং মেট্রোরেল সহ অন্যান্য প্রকৌশল নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ সহ সর্বোপরি শীর্ষপদগুলোতে অপ্রকৌশলী ব্যক্তিদের স্থলে প্রকৌশলীদের পদায়ন করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করাঃ প্রশাসন ক্যাডারের অনুমোদিত পদের অধিক পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে, একইপদে ২০ বছরের অধিক চাকুরীকালে পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রকৌশল কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে সংস্থাগুলোর কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রকৌশলীগণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
পলিটেকনিক শিক্ষকদের বর্তমান চাকুরি কাঠামো পরিবর্তনঃ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি লংঘন করে মহাপরিচালকসহ পরিচালকের সকল পদগুলো অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাগণ দখল করে নিয়েছে, অকারিগরি লোক দ্বারা কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদেরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিযোগ বিধি মোতাবেক কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা উক্ত পদগুলো পূরণের দাবী জানাচ্ছি।