480
ঢাকাশুক্রবার , ৩ মে ২০২৪
  1. অনুসন্ধানী ও বিশেষ প্রতিবেদন
  2. অপরাধ-আইন ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি, টেলিকম ও ই-কমার্স
  5. আবাসন-ভূমি-রাজউক-রিহ্যাব
  6. উদ্যোক্তা
  7. করপোরেট ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
  8. কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ
  9. গণমাধ্যম
  10. গৃহায়ন ও গণপূর্ত
  11. জনশক্তি ও পর্যটন
  12. জনসংযোগ-পদোন্নতি ও সম্মাননা
  13. জাতীয়
  14. ডিএস‌ই- সিএস‌ই-বিএস‌ইসি
  15. নগরজীবন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গুলশানের সেন্ট্রাল পার্ক ফের দখলের পাঁয়তারা

https://www.uddoktabangladesh.com/wp-content/uploads/2024/03/aaaaaa.jpg
উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ডেস্ক
মে ৩, ২০২৪ ১০:১৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজধানীর গুলশান শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্ক ধ্বংস করে চলছে অবৈধ কার্যক্রম। উচ্চ আদালতের আদেশে পার্কের এই জায়গা থেকে অবৈধ ওয়ান্ডারল্যান্ড চিলড্রেন পার্ক উচ্ছেদ করে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। রাজউকের মালিকানাধীন পার্কটি ব্যবস্থাপনার জন্য বুঝিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে। শিশুদের মতামত নিয়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে খেলাধুলার উপযোগী করে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয় সিটি করপোরেশন। তবে ঘুরেফিরেই আবারও পার্কটি এখন দখলদারের কবজায়। এখানে চালু হয়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ আর মিলছে না।

জানা যায়, ১০৩ ও ১০৯ নম্বর রোড-সংলগ্ন ৩ দশমিক ৩৩ একর আয়তনের গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক রাজউকের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ১৯৯০ সালে ওয়ান্ডারল্যান্ড চিলড্রেন পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করে মেসার্স ভায়া মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে পার্ক নির্মাণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গুলশানের এক বাসিন্দা ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রায়ে ওয়ান্ডারল্যান্ডের বরাদ্দ বাতিল করেন হাইকোর্ট। ২০১২ সালে এটি দখলমুক্ত করে রাজউক। ২০১৭ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউক ডিএনসিসির কাছে পার্কটি হস্তান্তর করে।

ডিএনসিসির তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক পার্কটি শিশুদের মতামত নিয়ে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেন। খেলাধুলা আর প্রাকৃতিকভাবে শিশুরা যাতে বেড়ে উঠতে পারে, এমনভাবে পার্কটির ডিজাইন করা হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

উদ্বোধনের পর পার্কটিতে ছিল দৃষ্টিনন্দন চক্রাকার হাঁটাচলার পথ, শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধীদের জন্য দুটি প্লেয়িং জোনসহ ২২ ধরনের খেলনা। সেই সঙ্গে পার্কজুড়ে নিম, হরীতকী, বহেরা, পারিজাত, কাঞ্চন, ডুমুর, হিজল, পলাশ, শিমুল, ছাতিম, মহুয়া ও অর্জুনগাছ, আকন্দ, কেয়া, বন তেজপাতাসহ দেশীয় ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমারোহ। ছিল ঘাসে আচ্ছাদিত একটি খেলার মাঠ। সব মিলিয়ে যেন সবুজের ছড়াছড়ি। সারি সারি গাছের পাশে দুটি হাঁটার পথ। পার্কটির উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার জন্য বিশেষ রাইড। তবে এ দুটি স্থান ছাড়াও ছিল স্লাইড, দোলনাসহ আরও কয়েকটি রাইড। শিশু-কিশোররা তখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পার্ক ও মাঠে খেলাধুলা আর আনন্দ-উৎসব করত। তবে এক বছর আগের এই প্রাণোচ্ছল পার্কটিতে এখন আর আনন্দ নেই।

ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়েছে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব নামে একটি সংগঠনকে। সরেজমিন দেখা যায়, পার্কটির উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শিশু-কিশোরদের খেলার জন্য বিশেষ রাইড ভেঙে ফেলা হয়েছে। খোলা খেলার মাঠটি আচ্ছাদিত করা হয়েছে উন্নতমানের ফেনশিন বেড়া দিয়ে। চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্টেডিয়ামের আদলে গ্যালারি। সবুজ পার্কের মাটিতে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ফুটবল টার্ফ। মাঠ আর পার্কে শিশু-কিশোরদের আর কোনো উপস্থিতি নেই। পার্কের ভেতরে একটি ব্যানারে ফুটবল টার্ফের নির্মাণকাজ মেয়র আতিকুল ইসলাম উদ্বোধন করেছেন বলে জানা যায়। এখন একাডেমির মাধ্যমে এখানে কোচিং করানো হয়। কোচিং ফি মাসিক দেড় হাজার টাকা। আর ক্রিকেট মাঠে এক ম্যাচ খেলতে গুনতে হবে ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবলে ইয়ুথ ক্লাবের সদস্যদের জন্য প্রতি ম্যাচ ১০০ টাকা আর অন্যদের জন্য ২০০ টাকা। সুইমিং শেখার জন্য আগে গুনতে হতো মাসিক ৩ হাজার আর প্রতি ঘণ্টায় ১০০ টাকা। ৩০ হাজার টাকা ফি দিয়ে এ ক্লাবের সদস্য হতে হয়। বর্তমান সদস্য আছে ৭০০ জন। পার্কটিতে অবৈধ স্থাপনা ও ভাড়ায় খেলাধুলা শুরু করলে পরিবেশবাদী আর স্থানীয়রা প্রতিবাদ শুরু করে। তারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আর পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শহীদ তাজউদ্দীন পার্ক স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মাহবুবুল করিম বাচ্চু বলেন, দায়িত্ব পেয়েই ইয়ুথ ক্লাব সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ আর খেলাধুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তিনি জানান, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মাঠ ও পার্ক দখল ও ধ্বংস বন্ধে সকাল ১০টায় সেখানে সমাবেশের আয়োজন করছেন তারা।

পার্কটির নকশা প্রণয়নকারীদের টিম লিডার বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাকিউল ইসলাম বলেন, শিশুদের প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে আমরা পার্কটির ডিজাইন করেছি। তবে পার্কটিতে এখন শিশুদের অবাধ এই সুযোগ বন্ধ করে কংক্রিটের আবরণ আর বাণিজ্যিকীকরণ দুঃখজনক।

ইয়ুথ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ড. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, পার্কটি পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ আর ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে তারা তিন বছরের জন্য নিয়েছেন। মেয়াদ শেষ হলে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়নও হবে। এ জন্য সিটি করপোরেশনকে কোনো জামানত বা ইজারামূল্য দেওয়া হয়নি। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খাইরুল আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।